নিউজ ডেস্ক
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়- ডেভিড ওয়ার্নারের বদলে কে? মার্নাস লাবুশেন, মিচেল মার্শ কিংবা ক্যামেরন গ্রিনকে ওপরে তুলে আনা হবে নাকি প্রথাগত কোনো ওপেনার বেছে নেওয়া হবে, এই নিয়েই চলছিল নানা বিতর্ক। সেই আলোচনায় নতুন মোড় যোগ হয়েছে স্টিভেন স্মিথ নিজ থেকেই ওপেন করতে চাওয়ায়। গ্রিন, স্মিথ, লাবুশেনদের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা নিয়মিত ওপেনার ম্যাট রেনশ, ক্যামেরন ব্যানক্রফট ও মার্কাস হ্যারিস। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুতই। দিন দশেক পরই শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ। শিগগিরই জানা যাবে, অ্যাডিলেইডে প্রথম টেস্টে উসমান খাওয়াজা সঙ্গী হবেন কেন। এর আগে দেখে নেওয়া যাক, গত কিছুদিনে এই প্রসঙ্গে কার মতামত কেমন।
ডেভিড ওয়ার্নার “আমি ওপেনার ছিলাম না। পথচলায় আমাকে শিখতে হয়েছে এটি। চ্যালেঞ্জিং ছিল অবশ্যই। তবে আমার ব্যাপারটি ছিল, আমার খেলার ধরন ছিল আগ্রাসী, আমার ডিফেন্সও সামলে নেওয়ার মতো। প্রথাগত একজন ওপেনার মাঠে নেমে তার মতোই খেলবে, লেংথ থেকে বল ছাড়বে এবং বল বুঝে খেলবে। আগে ওপেন না করেও কি ওপেনার হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব? আমার মনে হয়, সম্ভব। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়াটাই আসল।
” উসমান খাওয়াজা “ওপেন করা সহজ নয়, কঠিন কাজ। আমি এটা খুব ভালো করেই বলতে পারি, কারণ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আমি এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন-চার-পাঁচ-ছয়, সব পজিশনেই ব্যাট করেছি এবং নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওপেনিংই সবচেয়ে কঠিন। খুব, খুব কঠিন কাজ এটি, শারীরিকভাবে যতটা, তার চেয়েও বেশি মানসিকভাবে। এজন্যই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করার আগে কাউকে খুব একটা বলতে চাইনি যে, আগে তেমন একটা ওপেনিং করিনি।”
মার্নাস লাবুশেন “পাঁচ নম্বরে স্মিথের গড় ৫৮, চারে ৬১ তিনে ৬৭। কাজেই দেখা যাচ্ছে, যতটা ওপরে সে উঠছে, ততই গড় ভালো হচ্ছে। আমার কোনো সংশয়ই নেই যে, যদি এটাই বেছে নেওয়া হয় (স্মিথকে ওপেনিংয়ে), সে খুব ভালো করবে। সে সত্যিই এটা চায়, এই তাড়না তার প্রয়োজনৃ এমন জায়গায় ব্যাট করতে চায়, যেটি তার শক্তির জায়গা নয়। সরাসরি সেখানে খেলতে চায় সে।”
স্টিভ স্মিথ “সত্যি বলতে, খুশিমনেই ওপরে ব্যাট করতে রাজি আমি। তারা যদি এরকমই চায়, আমি তাহলে খুবই আগ্রহী। আমি নিশ্চিত, নির্বাচকরা, রন (কোচ ম্যাকডোনাল্ড) ও প্যাটি (অধিনায়ক প্যাট কামিন্স), ওরা সবাই এই ম্যাচ শেষে কথা বলবে এটা নিয়ে। তবে আমি নিশ্চিতভাবেই খুবই আগ্রহী।”
ট্রাভিস হেড “আমার মতে, এটি বিশেষজ্ঞ কারও কাজ। অনেক দিন ধরেই যারা এই সুযোগটির অপেক্ষায় আছে, প্রথম সুযোগটি তাদেরই প্রাপ্য। তবে আলোচনা চলছে সবাইকে নিয়েইৃ আমাকে নিয়ে ব্যাপারটি হলো (ওপেন করার) কেবল উপমহাদেশইৃ। তবে আমার পজিশন নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া হবে বলে মনে করি না।”
মিচেল মার্শ “এই আলোচনাকে আমি স্বাগত জানাই এবং ডেভি (ওয়ার্নার) চলে যাওয়ায় একজন ওপেনার আমাদের তো লাগবেই। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি হলো, দলে ফিরতে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে এবং সামনে তাকিয়ে ওপেনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কোনো যুক্তি আমি দেখি না। ছয় নম্বরে ব্যাট করতেই পছন্দ করি আমি এবং সবশেষ চার টেস্টে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছি আমি, টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে নিজের সত্ত্বা ফিরে পেয়েছি এবং এটা স্রফে উপভোগ করছি। তা বদলাতে ইচ্ছুক নই আমি।”
অ্যালেক্স কেয়ারি “যেখানে ইচ্ছে ব্যাট করতে পারে স্টিভ (স্মিথ)। ক্যারিয়ারে সে সম্ভবত প্রমাণ করেই ফেলেছে, চ্যালেঞ্জ যেটাই ছুড়ে দেওয়া হোক, সাফল্যের পথ সে খুঁজে নিতে পারে। আমাদের দারুণ কিছু ওপেনার আছে (ঘরোয়া ক্রিকেটে), যারা দারুণ করছে। অবশ্যই আরও কিছু নাম উঠে আসছে। এখন স্মাজ (স্মিথ) নিজের নাম সেখানে তুলে ধরেছে। তাকে বেছে নেওয়া হলে অবশ্যই দারুণ করবে। নতুন বলের মুখোমুখি তো অনেক সময়ই হয়েছে সে।”
প্যাট কামিন্স “চার নম্বরেই ওকে (স্মিথ) নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট আমি। মার্নাস (লাবুশেন), স্মাজ (স্মিথ), ট্রাভ (হেড) ও মিচ (মার্শ) আমাদের হয়ে তিন-চার-পাঁচ-ছয় নম্বরে ভালো করছে। আমি সেটা এলোমেলো করতে চাই না।”
অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড (অস্ট্রেলিয়ার কোচ) “স্টিভের (স্মিথ) শক্ত ভাবনা আছে, সে প্রকাশ্যে তা বলেছে। আমরা তা বিবেচনা করব। তার এভাবে এগিয়ে আসা অবশ্যই দারুণ। তবে আরও অনেকেই এখানে আগ্রহী। তবে তিন ও চার নম্বরেও স্টিভ বেশ কার্যকর। কোনো একটি ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে দলের শক্তির জায়গা যাতে নষ্ট না হয়, সেটিও ভাবতে হবে। তো সেদিক থেকে সমন্বয় করতে হবে।”
ক্যামেরন ব্যানক্রফট “অনেক ক্রিকেটারই জায়গা বদল করেছে এবং ওপেনিংয়ে উঠে ভালো করেছে। তবে সবাই তো আর ওপেন করতে আগ্রহী নয়। আমার মনে হয়, এই কাজটা বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের এবং নিশ্চিতভাবেই এটা দারুণ চ্যালেঞ্জিং। সফল হলে এটি খুব তৃপ্তিদায়কও।”
মার্কাস হ্যারিস “খুব ভালো বিতর্ক এটি। নির্বাচকদেরই জিজ্ঞেস করতে হবে, তারা কী চায়। তাদের সিদ্ধান্ত এটি। তবে ওপেন করার কাজটি খুব সহজ নয়। আমার মনে হয়, এখনও ৭-৮ বছর খুব ভালো খেলতে পারি আমি। ভিক্টোরিয়া দলে আসার পর থেকে নিজেকে যথেষ্ট প্রমাণ করেছি বলেই মনে হয়, বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেরেছি কি না, সেটা বিতর্কের ব্যাপার এবং লোকের মতামত থাকবেই। সবশেষ দুটি টেস্টে আমার মনে হয়েছে, নিজেকে খুঁজে পাঁচ্ছিলাম। এরপর আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরের যে ব্যাপারগুলি, তা পক্ষে আসেনি। সমস্যা নেই তাতে।”
ম্যাট রেনশ “আমার মনে হয়, টেস্টে ওপেন করাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। চকচকে নতুন বল খেলতে হয়, বোলাররাও তখন থাকে তরতাজা, পিচেও তখন রসদ থাকে। কাজেই আগে কখনও ওপেন করেনি, এমন ব্যাটসম্যানদের জন্য এটা চেষ্টা করা কঠিন।”
রিকি পন্টিং “এই যে এত আলোচনা, এটির পেছনে মূল কারণ হলো, তারা একাদশে ক্যামেরন গ্রিনের জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তারা যদি এটাই করতে চায়, তাহলে ব্যাটিং অর্ডারে যতটা কম সম্ভব ব্যাঘাত ঘটিয়ে তা করতে হবে। তিন ও চারে স্মিথ ও লাবুশেন দুর্দান্ত করে আসছে। গত তিন-চার বছরে তারা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ে মেরুদন্ড। এটায় বিঘ্ন ঘটতে দেখতে চাই না। আমার মতে, ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে সুযোগ দেওয়া উচিত।”
মাইক হাসি “খেলাটায় সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ওপেন করা। ব্যক্তিগতভাবে তাই আমি মনে করি, যদি আমি দল নির্বাচন করতাম, প্রথাগত ও যথাযথ টেস্ট ওপেনারই বেছে নিতাম। দীর্ঘ সময় ধরে যে এ কাজটি করে আসছে। কারণ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটি খুব বেশি না করে থাকলে, টেস্টে ওপরে ব্যাট করাটা কঠিন হবে।”
শেন ওয়াটসন “ক্যামেরন গ্রিনকে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে লাগবেই এবং এই মুহূর্তে যে সুযোগটি তৈরি হয়েছে, তা ওপেনিংয়ে। তার বোলিংয়ের দিকটি স্রফে ভালোভাবে সামলাতে হবে, আমার ক্ষেত্রে যেমনটি সামলাতে হয়েছিল, যখন ওপেন করেছিলাম। তবে ওপেনিং ব্যাটারের মতো স্কিল, রান করার সামর্থ্য ও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বোধশক্তি অবশ্যই তার (গ্রিন) আছে। ম্যাচ পরিকল্পনা সাজিয়ে উঠতে হয়তো দু-একটি ম্যাচ তার লাগতে পারে। তবে অবশ্যই এটা করার মতো সেই স্কিল ও মানসিকতা তার আছে।”
মার্ক ওয়াহ “আমি ক্যামেরন গ্রিনকে নেওয়ার পক্ষে। তাকে দলে লাগবেই। বল হাতে সে অবদান রাখতে পারে, ফিল্ডিংয়েও। অনেকটা শেন ওয়াটসনের মতো হতে পারে সে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করার আগে ওয়াটসনও মিডল অর্ডারে খেলত। সে (গ্রিন) পেস বল ভালো খেলে। সারাদিন বাইরে বসে থেকে সে নার্ভাসও হয়ে উঠতে পারে, কাজেই নতুন বলের সামনেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তার টেকনিক বেশ আঁটসাঁট, উচ্চতা ভালো আমার ভোট তার পক্ষে।”