নিউজ ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পথে আওয়ামী লীগ। বুধবার সকালে সংসদ সদস্যদের শপথ ও সংসদ নেতা নির্বাচন হবে। পরদিন বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ সন্ধ্যা ৭টায়। এরপর মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নতুন সরকারের যাত্রা। মনোনয়নের মতো এবার মন্ত্রিসভায়ও থাকবে চমক।
আসতে পারে বেশকিছু নতুন মুখ। এরই মধ্যে মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সচিব মাহবুব হোসেন এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ এবার দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে অনেকের। অনেকে বাদ পড়তে পারেন। এরই মধ্যে ছয়জনের বাদ পড়ার বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রমোশন হতে পারে বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর। মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন? এনিয়ে মুখ খুলতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা। একাধিক নেতা বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।
এ বিষয়ে কোনো কমেন্ট করতে চাই না।’ আবার কেউ কেউ বাদ পড়া, যুক্ত হওয়া নিয়ে কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চান না। কারা হতে পারেন মন্ত্রিসভার নতুন মুখ বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিভিন্ন সেক্টরে তাদের বেশ কাজ রয়েছে।
তাদের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসাদের সুনির্দিষ্ট সেক্টরে কাজে লাগাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে আলোচনায় সাবেক আমলা ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, আইইবির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আইনের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেটরত্ন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এর বাইরে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নও আলোচনায় আছেন। কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রুমানা আলী, ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলসহ অনেকেই আলোচনায় আছেন।
এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও আসতে পারেন এবারের মন্ত্রিসভায়। পুরোনোদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ অনেকে থাকছেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
তবে অনেকের দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে। পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের। তবে অনিশ্চিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, বন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের ভাগ্য। বাদ পড়তে পারেন ডজনখানেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়নেই বাদ পড়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেননি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এই ছয়জন নতুন মন্ত্রিসভায় আসছেন না এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে আরও কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন এই মন্ত্রিসভা থেকে। এর মধ্যে বয়স ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এনেছিল ৯২ নতুন মুখ। বাদ দিয়েছিল ৬৯ এমপিকে।
দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্বের বিবেচনায় তরুণ এবং কাজের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে এবার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী এবং বর্তমানের একই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘কাল সংসদ সদস্যদের শপথের মধ্য দিয়ে সবার সব পদ অকার্যকর হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাকে কোথায় কাজে লাগাবেন, তিনি ভালো জানেন। তিনি যেখানেই দেন আমরা ব্যক্তির স্বকীয়তা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করে যাবো।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘একটা ভালো মন্ত্রিসভা উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তরুণ-প্রবীণের সমন্বয় হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কারিগর থাকবে এই মন্ত্রিসভায়। সাইজেও হবে মাঝারি।’