নিউজ ডেস্ক
আমির হোসেন লোন একজন ক্রিকেটার। কিন্তু তার দুটি হাতই নেই। কাশ্মীরের ওয়াঘামা গ্রামের বাসিন্দা আমির আট বছর বয়সে তার বাবার মিলে কাজ করার সময় নিজের হাত দুটি হারিয়েছিলেন। তবু ক্রিকেটার হওয়ার আশা ছাড়েননি তিনি। একজন শিক্ষককে তিনি পেয়েছিলেন, যিনি তার ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে বুঝতে পারেন। তার প্রতিভা আবিষ্কার করে তাকে পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই আমিরকে উদ্ধৃত করে বলেছে, দুর্ঘটনার পর, আমি আশা হারাইনি এবং কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি নিজেই সব কিছু করতে পারি এবং আমি কারও উপর নির্ভরশীল নই। আমার দুর্ঘটনার পর কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। এমনকি সরকারও আমাকে সমর্থন করেনি, কিন্তু আমার পরিবার সব সময়ে আমার পাশে ছিল। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ঘাড় ও কাঁধের মাঝখানে ব্যাট ধরার দক্ষতা আয়ত্ত করেন আমির। আর পা দিয়ে বোলিং করার কঠোর লক্ষ্যে সফল হন তিনি। ৩৪ বছয় বয়সি তারকা বলেন, ‘আমার খেলার জন্য আমি সর্বত্র প্রশংসা পেয়েছি, এবং আমি মনে করি, আল্লাহ আমার সঙ্গে রয়েছেন, যে কারণে আমার কঠোর পরিশ্রম প্রতিফলিত হয়েছে। কারণ পা দিয়ে বোলিং করা সত্যিই কঠিন ছিল, কিন্তু আমি সেই দক্ষতা এবং কৌশল শিখেছি। আমি প্রতিটি কাজ নিজেই করি, এবং আমি আল্লাহ ছাড়া কারও উপর নির্ভরশীল নই।’
আমির ২০১৩ সাল থেকে প্যারা ক্রিকেট খেলছেন এবং বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর প্যারা দলের অধিনায়ক। তিনি নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি ২০১৩ সালে দিল্লিতে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলাম এবং ২০১৮ সালে আমি বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলাম। এর পর নেপাল, শারজা ও দুবাইয়ে ক্রিকেট খেলেছি। আমাকে আমার পা দিয়ে খেলতে (বোলিং) এবং কাঁধ ও ঘাড় দিয়ে ব্যাটিং করতে দেখে সবাই হতবাক। আমাকে ক্রিকেট খেলার শক্তি দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ সচিন টেন্ডুলকার এবং আশিস নেহরা অতীতে আমিরকে তার দৃঢ় সংকল্প এবং অটুট চেতনার জন্য প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন। তার চিহ্ন হিসেবে নেহরা মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই ক্রিকেটারকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন।
বলিউড তারকা ভিকি কৌশল আবার ২০২৩ সালে রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ চলাকালীন আমিরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তিনি এই ক্রিকেটার এবং তার যাত্রার কথা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘যদি আমি কখনও একটি বায়োপিক করার সুযোগ পাই, তবে কোন ভারতীয় ক্রিকেটার হবেন তিনি, এই উত্তর আমি পেয়ে গেলাম। সিনেমার মাধ্যমে ওর (আমির) জীবন তুলে ধরার সুযোগ পেলে, নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করব।’