নিউজ ডেস্ক
মানুষকে বই পড়ায় আগ্রহী করতে রেলস্টেশন, বাসস্টেশন ও বিনোদন পার্কে মিনি লাইব্রেরি (ছোট গ্রন্থাগার) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা, বৃদ্ধাশ্রম ও বেমহুতল আবাসিক ভবনে গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে। গত ৩১ ডিসেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বইপ্রেমী তৈরি করতে ছোট গ্রন্থাগার করার উদ্যোগটি ভালো। তবে গ্রন্থাগারে কী ধরনের বই থাকবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আকর্ষণীয় বই না দিয়ে যদি পছন্দের কারও বই গ্রন্থাগারে দেওয়া হয়, তাহলে পাঠক সেখানে যেতে আগ্রহ দেখাবে না।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর শুধু বই সরবরাহ করবে। সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের বই ও সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকার বই দেওয়া হবে। কিন্তু পাঠকক্ষের জন্য ছোট্ট স্থাপনা ও বই রাখার র্যাক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দিতে হবে। কারণ, এত স্থাপনা করার মতো অর্থ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নেই। রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, বিনোদন পার্ক যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে সভা করবে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংশ্লিষ্টরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের জায়গায় গ্রন্থাগার করার জন্য জায়গা দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এ বিষয়ে সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে বইপ্রেমী করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছোট গ্রন্থাগার করার পাশাপাশি সারা দেশে কুইজ আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, পাঠকক্ষে সব ধরনের বই থাকবে। ইতিহাস, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন—সব ধরনের বই থাকবে। [যদি সেখানে আকর্ষণীয় বই দেওয়া হয়, তাহলে গ্রন্থাগার চলবে। কিন্তু সেখানে যদি মন্ত্রী বা সরকারের নিজস্ব বই থাকে, তাহলে মানুষ সেই বই পড়বে না। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ ও কথাশিল্পী।] তরুণদের বই পড়ার হার কমে যাওয়ার প্রবণতার কারণে পাঠাভ্যাস বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিনোদনকেন্দ্রে পাঠকক্ষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রমনা পার্ক। তবে গ্রন্থাগার করার আগে পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। যাতে করে পার্কের ভেতর ছোট আকারে একটি স্থাপনা করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেখানে বই রাখার র্যাক করে দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে রেলপথ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠকে বসবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। কমলাপুর রেলস্টেশনে ছোট গ্রন্থাগার করার চিন্তা রয়েছে।
এ ছাড়া ট্রেনের ভেতরেও যাত্রীদের বই দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁর মাধ্যমে যাত্রার শুরুতে বই দিয়ে শেষে যাত্রীদের কাছ থেকে আবার বই ফেরত নেওয়া হবে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার ইস্কাটনে সচিব নিবাসে এরই মধ্যে একটি গ্রন্থাগার করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বই সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারের আরও যেসব আবাসন প্রকল্প রয়েছে, তাঁর তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানেও গ্রন্থাগার করে বই দেওয়া হবে। তবে সবই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আগ্রহে। রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে বই সরবরাহ করতে গেলে একটি প্রকল্প নিতে হবে। মিনার মনসুরের দেওয়া তথ্যমতে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে গত বছর থেকে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বই দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১১০টি প্রতিষ্ঠানে বই দেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায় সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা দামের বই আর সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা দামের বই অনুদান দেওয়া হয়।
এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে ১৩০টি সেলুনে প্রতিটিতে ২৫টি করে বই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও কথাশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। বইয়ের ওপর আগ্রহী করতে মিনি গ্রন্থাগার করার উদ্যোগটি ভালো। তবে যদি সেখানে আকর্ষণীয় বই দেওয়া হয়, তাহলে ছোট গ্রন্থাগার চলবে। কিন্তু সেখানে যদি মন্ত্রী বা সরকারের নিজস্ব বই থাকে, তাহলে মানুষ সেই বই পড়বে না। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রন্থাগারে বিসিএসের কোনো বই রাখা যাবে না। কেউ যদি নিজে বিসিএসের বই নিয়ে এসে পড়ে, তাকে পড়তে দেওয়া যেতে পারে। তবে বই চুরি হওয়ার শঙ্কা থাকবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে যোগ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে একজনকে বেতনভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।