ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাড়তে পারে করোনা সংক্রমণ

নিউজ ডেস্ক

# ঠান্ডা জ্বর মনে করে সাধারণ মানুষ পরীক্ষা করছেন না।

# উপধরন জেএন.১ মারাত্মক না হলেও সংক্রমণের হার বেশি।

# ষাটোর্ধ্ব ও কোমরবিডি রোগাক্রান্তদের জন্য হুমকি হতে পারে।

# সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা, মাক্স পরা জরুরি।

শীতে ফ্লু ভাইরাস, রাইনোভাইরাস এবং শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতো অন্যান্য মৌসুমি ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১। গত ডিসেম্বরে (২০২৩) করোনায় সংক্রমণের হার বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার মূল চিত্র এর থেকেও বেশি। শীত কমলে চলতি বছরের (২০২৪) ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়তে পারে। তবে, করোনার নতুন ধরন নিয়ে আতঙ্ক হওয়া কিছু না থাকলেও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। শনাক্ত রোগীদের ৩২ জনই ঢাকা মহানগরে এবং একজন করে কক্সবাজার ও চাঁদপুরে।

তবে, এসময়ে আক্রান্তদের মধ্যে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকেই নতুন এ ধরনের সংক্রমণ দ্বারা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এটিকে কড়া নজরে রেখেছে এবং করোনার এ উপধরনকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘আগ্রহের বৈকল্পিক’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। নতুন ধরন জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই (যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো ও ক্লান্তি ইত্যাদি)। এছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, ডায়রিয়া ও বিভ্রান্ত বোধ করা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনার মূল চিত্র অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ ঠান্ডা জ্বর মনে করে নিয়মিত পরীক্ষা করছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত (২৬ জানুয়ারি ২০২৪) দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ জন। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪৮১ জনে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯১ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৬৪ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ নারী। আর মোট আক্রান্তের ৫১ শতাংশ ও মৃতের ৩০ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ শতাংশ ও খুলনা বিভাগে ১২ শতাংশ। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর শনাক্ত হয় ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মারা যায় ৭ হাজার ৫৫৯ জন। এর পরের বছর ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মারা যায় ২০ হাজার ৫১৩ জন। এ বছরের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয়। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মারা যায় এক হাজার ৩৬৮ জন। আর গত ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মারা গেছে ৩৭ জন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শীতকালে বাংলাদেশে করোনা রোগী কিছুটা কম থাকে। তবে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শীত কমলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। বর্তমানে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১-এর কারণে সংক্রমণ হারও বেড়েছে।

নতুন এ উপধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন উপধরন মারাত্মক না হলেও সংক্রমণ হার অনেক বেশি। আমদের মনে রাখতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য করোনা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই ষাটোর্ধ্ব ও কোমরবিডি (দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা) রোগাক্রান্তদের জন্য হুমকি হতে পারে। তাই এ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। নতুন এ ধরনের বিরুদ্ধেও করোনা টিকা কার্যকর জানিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, যারা মেডিকেল বা হাসপাতালে কাজ করেন। যাদের বয়স ৬০ এর বেশি, কোমরবিডিটি আছে তাদের মাক্স পরা জরুরি। এছাড়া যারা এখনো চতুর্থ ডোজের টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়া উচিত।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।