বিরোধীদের সহিংসতা-নৈরাজ্য পরিহারে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

নিউজ ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণের এবং গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেইসঙ্গে বিরোধী দলগুলোকে আগামী দিনে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করতে এবং সরকারকে সংযত আচরণের আহ্বান তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জনগণের রায় মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্ত-স্নিগ্ধ যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপ সার্থক হয়েছে।’ রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে। সরকারও এক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী দেশে যে নৃশংস সহিংসতা হয়েছিল তা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এর মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনসহ পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি।; গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নিষ্কণ্টক পথচলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো উদার ও গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।

জাতীয় সংসদকে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূলভিত্তি অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ জনগণের সব প্রত্যাশার ধারক ও বাহক। তাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে সংসদ যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে- এটাই জনগণের প্রত্যাশা।’ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণ অনেক আশা নিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, যেন তাদের চাওয়া-পাওয়া আপনারা সংসদে তুলে ধরেন। এটাই সংসদ সদস্য হিসেবে আপনাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য।’ উন্নয়নের মূল ভিত্তি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়।

গত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বজায় থাকার কারণে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নের এ গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত স্বল্পমেয়াদি (২০২৫ সাল), মধ্যমেয়াদি (২০৩১ সাল) এবং দীর্ঘমেয়াদি (২০৪১ সাল) কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন নবগঠিত মন্ত্রিসভাকে নিশ্চিত করতে হবে।’

এর আগে বিকেল তিনটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশ শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পরে প্রথম দিনের অধিবেশন মুলতবি করা হয়। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের মেয়াদ থাকায় ৩০ জানুয়ারি সংবিধানের ৭২ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দ্বাদশ সংসদের প্রথম সংসদ অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।