গোমস্তাপুরে কৃষিতে রঙিন ফুলকপি - কৃষকের মুখে রঙিন হাসি

সারওয়ার জাহান

সময়ের পরিবর্তনে এসেছে নতুন নতুন ফসল, প্রসারিত হচ্ছে নব নব প্রযুক্তি। কৃষিকে বহুমুখীকরণে সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা এখন অনেক অগ্রগামী । উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এবং কৃষি অধিদপ্তরের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উপজেলার কৃষি ক্ষেত্রে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করে সফলতা পেয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ভালো ফলনের পাশাপাশি নতুন জাতের এ ফুলকপির ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। সাদা ফুলকপির চাইতে রঙিন ফুলকপি চাষবাদে কম সময় লাগে বলে কৃষকরা দিন দিন উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছে। রঙিন ফুলকপি আর সাদা ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য শুধু বীজে।

যুগ যুগ ধরে বাজারে প্রচলিত সাদা ফুলকপির পাশাপাশি নতুনমাত্রা যোগ করেছে রঙিন ফুলকপি। সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের কমতি নেই এই ফুলকপি দেখে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশে রঙিন ফুলকপি চাষ শুরু হয়েছে। তবে গোমস্তাপুরে এবারই প্রথম চাষ হয়েছে রঙিন ফুলকপির।

আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগীতায় পরীক্ষামূলকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ইউনিয়নের জাহিদনগর গ্রামে প্রথমবার এ রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে।

চারা রোপণের পর থেকে আড়াই মাসের (৭৫ দিনের) মধ্যে জমি থেকে ফসল তোলা যাচ্ছে। এই ফুলকপি চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আগ্রহী কৃষকসহ উৎসুক সাধারণ মানুষ। তাদের কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। এই রঙিন ফুলকপি চীন এবং ইউরোপে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গোমস্তাপুর ইউনিয়নের জাহিদনগর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমি প্রথম কৃষক এই উপজেলায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। শুরুর প্রথম দিকে আমি এ রঙিন ফুলকপি চাষ করে বেশ চিন্তার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু এর ফলন দেখে আমি খুব আশাবাদী যে, এ রঙিন ফুলকপি থেকে বেশ মুনাফা অর্জন করতে পারব। আগামীতে কৃষি অফিসের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এ রঙিন ফুলকপির চাষ আরো বেশী করে করবো।

একই গ্রামের আরেক কৃষক সুমন আলী বলেন, এ রঙিন ফুলকপির চাষপদ্ধতি সম্পর্কে ফিরোজের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করে আমিও আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আগামীতে আমিও এই রঙিন ফুলকপির চাষ বৃদ্ধি করবো। এছাড়া উপজেলার গোমস্তাপুর বাজার পাড়ার ইব্রাহিম আলীও এ রঙিন ফুলকপির চাষাবাদ করেছেন। তিনিও আশাবাদী রঙিন ফুলকপি থেকে আমি ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারব। আমার মনে হয়েছে এটি একটি কৃষিবান্ধব ফসল। আগামীতে চাষি  বেশি করে এ রঙিন ফুলকপির চাষ করার আশা প্রকাশ করেন। চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে মোট ২ বিঘা জমিতে এ রঙিন ফুলকপির আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। এই রঙের সবজিতে অন্য রঙের সবজির তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন ‘এ’ উপাদান থাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, কৃষি ক্ষেত্রে দেশের অন্য অঞ্চলের ন্যায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রকৃতি ও জনসংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের চাহিদা বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এবং পুষ্টিকর কৃষি ও নতুন নতুন জাতের ফসল উৎপাদনে সাধারণ কৃষককে আগ্রহী করে তুলতে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

এরই ধারাবাহিকতায় গোমস্তাপুরে প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এটি একটি পরিবেশ বান্ধব ফসল। রঙিন ফুলকপি ও সাদা ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য শুধু বীজে। চাষ পদ্ধতির অন্যান্য সব প্রক্রিয়া একই রকম।

বর্তমানে বাজারমূল্য সাদা ফুলকপির তুলনায় রঙিন ফুলকপির ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি। রঙিন ফুলকপি চাষে রোগবালাই কম হয়। জৈব উপায়ে এই ফুলকপিতে আসা পোকামাকড় দমন করা যায়। চাষিকে বাড়তি কোনও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।

প্রথম দিকে এ রঙিন ফুলকপি চাষে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। পরে কৃষক ফিরোজ আলী আগ্রহ দেখালে তাকে কৃষি অফিস থেকে ফুলকপির চারা, জৈব সার, কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় সার সহ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এটি স্থানীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষে কতটা উপযোগী বা কেমন ফলন হয় আমরা দেখতে চেয়েছি। আমরা সফল হয়েছি‌ বলে জানান।

তিনি আরো জানান, অস্ট্রেলিয়া ও চীনসহ অন্যান্য দেশে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি এবং  দেখতেও সুন্দর। তার মতে, সাধারণ ফুলকপি চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ হয়। খরচ ও পরিশ্রম একই। শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা জানান, স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কৃষি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে। সেই ক্ষেত্রে উপজেলার কৃষিকে এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ এক যোগে কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমবার এ উপজেলায় রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে।

পরীক্ষামূলকভাবে ২ বিঘা জমিতে এ রঙিন ফুলকপির চাষ কর হয় । এটি পরিবেশবান্ধব ফসল। খেতেও বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। আশা করি আগামীতে এ রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠবেন। সেই সাথে এই ফুলকপি চাষ করে কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করুন এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনে কাজ করবে ।

কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে। তিনি আরো বলেন, কৃষক ও প্রজন্মের মেলবন্ধ এখন অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগ। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে তরুণরাও আগ্রহী হয়ে উঠবে কৃষি কাজে।

কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে কৃষকরা কৃষিকাজে আগ্রহী হয়ে উঠবে। আসুন, আমরা কৃষি ও কৃষকের কথা বলি। আমাদের নাড়ির টান গ্রাম বাংলার কৃষি ও কৃষকের সাথে।

কৃষকের কথা ভাবুন, কৃষকদের যথাযথ সম্মান করুন। সবাই এক কন্ঠে বলি - বাংলার কৃষক তোমাদের জানাই লাল সালাম।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।