নিউজ ডেস্ক
নাজমুল হোসেন শান্ত এখন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। সোমবার বিসিবির বোর্ড সভায় তাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাকিব আল হাসান অধিনায়কত্ব করবেন না আর, এ কারণেই নতুন অধিনায়ক খুঁজে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বেশ ভালো খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অধিনায়ক হিসেবে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন শান্ত। যে কারণে নতুন অধিনায়ক হিসেবে বিসিবিকে খুব বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হয়নি। ভাবনা-চিন্তাও করা লাগেনি। শান্তর কাঁধেই দেওয়া হলো তিন ফরম্যাটের দায়িত্ব। অথচ, এই নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রচুর সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। একের পর এক সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিল তার সমালোচনা তুমুল সরব।
এমনকি, দল থেকে বাদ না দেওয়ার কারণে তাকে ‘লর্ড শান্ত’ হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আজ সকালে দুর্দান্ত ঢাকার অনুশীলন শুরুর আগে মিডিয়ার সঙ্গে নির্বাচকমণ্ডলী, অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন দলটির কোচ ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। এ সময় মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে নিয়ে একটি প্রশ্ন করা হলে ক্ষোভের সঙ্গেই উত্তর দেন তিনি। জানিয়ে দেন, সোশ্যাল মিডিয়ার রি-অ্যাকশন দেখে নির্বাচকমণ্ডলী নির্বাচন কিংবা অধিনায়ক নির্বাচন করলে তো হবে না। খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া দেখে যদি সিলেক্টর তৈরি করি, সিলেক্টর-প্লেয়ারদের গালি দেই! লর্ড শান্ত আজ তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক। কয়দিন আগেই শান্ত লর্ড ছিল। এসব কথা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই ছড়ায়। আপনাদের (সাংবাদিকদের) দায়িত্বও খুব জরুরি। সমালোচনা থাকবেই। শান্ত ভালো খেলবে না, সমালোচনা হবে। লিপু ভাই ভালো কাজ করবে না, সমালোচনা হবে। কিন্তু লিপু ভাইয়ের ভালো কাজের কথাও বলতে হবে।
’ সুজনের অভিমত হলো, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং সুমনের অধীনে অনেক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সেসবও স্মরণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘নান্নু ভাই, সুমনের অধীনে বাংলাদেশ দল অনেক সাফল্য পেয়েছে। উনাদের অবদান ভুলে গেলে হবে না। পরিবর্তন দরকার ছিল, বিসিবির এই সিদ্ধান্ত…, নান্নু ভাইরা যতদূর করেছেন, অবশ্যই অনেক ভালো কাজ করেছেন। আমি কোনো দোষারোপ করি না, উল্টো স্যালুট করি। তারা ধৈর্যের সাথে যে কাজটা করে গেছেন। সিলেকশন সহজ কাজ না, আপনি তো সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। এতজন থেকে ১৫ জন নেওয়া, আবার পছন্দ-অপছন্দ আছে। এগুলোর মধ্যে কাজ করা সহজ ছিল না। ’ হাবিবুল বাশারকে প্রধান নির্বাচক করা হবে, এই আশায় ছিলেন খালেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আশা করেছিলাম সুমনই হবে (প্রধান নির্বাচক)। কেন হয়েছে (গাজী আশরাফ লিপু), যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা সিদ্ধান্তের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তারাই বলতে পারবেন। আমি অবশ্যই মনে করি, সুমন যোগ্য ছিল। ও বাংলাদেশের সফল ক্যাপ্টেন ছিল, সফল ক্রিকেটার ছিল। এত বছর দলের সাথে কাজ করেছে। আমি আশা করেছিলাম নান্নু ভাইকে না রাখা হলে ও-ই প্রধান নির্বাচক হবে। যে সিদ্ধান্ত বোর্ড দিয়েছে, আমাদের সম্মান জানাতে হবে। ’ বিসিবি সভাপতি আগেও একবার বলেছিলেন, নির্বাচক না থাকলেও নান্নু-সুমনদের অন্য কোনো পদে পদায়ন করা হতে পারে। আপনি সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবি পরিচালক হিসেবে কী মনে করেন? কোথায় কাজে লাগানো যেতে পারে তাদের? ‘কোথায় লাগানো যেতে পারে এটা এখনই বলা যাবে না। ওদের ক্রিকেট মেধা নিয়ে আমরা অনেকভাবে কাজ করতে পারি। হয়ত অন্য কোনো ম্যানেজেরিয়াল পোস্টে কিংবা আমি জানি না…, আমাদের টাইগার্স আছে, এইচপি আছে, এগুলোর দুই জায়গায় যদি দু’জনকে দেয়া যায়, হয়তো বা ডিসিশন মেকিংয়ে, বা প্ল্যানিংগুলোতে তারা অবদান রাখতে পারবে।’ শান্ত ৩ ফরম্যাটে ক্যাপ্টেন হলেন, এটাও কী আপনার কাছে সারপ্রাইজিং কি না? এ প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ‘না সারপ্রাইজ না। শান্ত তো তিন ফরম্যাটেই খেলছে। এটা আমার কাছে কোনো অবাক করা বিষয় না।
সাকিব যদি না করে (অধিনায়কত্ব) আমি মনে করি, শান্ত অন্যতম সেরা পছন্দ। এ নিয়ে সন্দেহ নেই। শান্ত একদম মাঠের ছেলে, সত্য কথা বলতেই হবে। আমি সব সময় ফিল করি, হয়ত এক ফরম্যাটে অন্য এক ক্যাপ্টেন দিতে পারতাম। লাল বল সাদা বল আলাদা, হয়তো বা। অনেক সময় ভালোও হয় খারাপও হয়। যেহেতু শান্ত তিন ফরম্যাট খেলছে। দল নিয়ে কাজ করতে পারবে। ওকে শুভকামনা জানাই, এক বছর দেওয়া হয়েছে তাকে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত। ও যেন ভালো কিছু করে, লম্বা সময় অধিনায়কত্ব করে, পারফরম্যান্স ধরে রাখে, এটা অনেক ভালো হবে। ‘ হান্নান সরকার আগে এইজ লেভেলে কাজ করেছে। ভালো ক্রিকেটার ছিলেন। নির্বাচক হিসেবে কেমন করবেন? সুজন বলেন, ‘খুব ভালো। হান্নান অনেক পরিশ্রমী মানুষ। ক্রিকেট খুব ভালো বোঝে, মাঠে থাকে। সিলেকশন জিনিসটাও খুব ভালো বোঝে। এত বছর ধরে যেহেতু কাজ করছে। সিনিয়র দলের সিলেকশন জুনিয়র দলের সিলেকশনের চেয়ে সহজ। জুনিয়র সিলেকশনে অনেকের মাঝ থেকে খেলোয়াড় বের করে আনা এত কঠিন। বিপিএল, প্রিমিয়ার লিগ এইটুক খেলা দেখলেই বোঝা যাবে কারা ভালো ক্রিকেটার আসছে। জুনিয়র ক্রিকেট ৬৪ জেলায় খেলা হয়। হান্নান অভিজ্ঞ। জুনিয়র লেভেলে যারাই সিলেকশনে আছে শান্ত, সেজান, অপি তারা সবাই খুবই অভিজ্ঞ। হান্নানের অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। অন্যরাও এটা দেখে প্রেরণা পাবে। ’