সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে নামছে দুদক

নিউজ ডেস্ক

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য তিন সদস্যদের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

সোমবার সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, ‘গত ১৮ এপ্রিল দুদকে একটি সভা হয়। সেখানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিবেচনায় নিয়ে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।

দুদক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা হলেন দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

এর আগে গত রোববার বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদকের কাছে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তিনি হাইকোর্টে যাওয়ার কথাও জানান।

এদিকে সোমবার সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী সালা উদ্দিন রিগ্যান। গত ৪ এপ্রিল তিনি দুদকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছিলেন।

রিটের বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, তারা রিটের একটি কপি হাতে পেয়েছেন। সেখানে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে।

সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের বিপুল সম্পদের কথা তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত ভাওয়াল রিসোর্ট রয়েছে বেনজীরের।

২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল প্রায় ১০৬ বিঘা জমির ওপর এটির যাত্রা শুরু। পরে এতে যোগ হয় আরও ৫৪ বিঘা জমি। ৬২টি ভিলার সঙ্গে হেলিপ্যাড, রেস্তোরাঁ, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল, স্পাসহ অনেক কিছু রয়েছে এর ভেতরে।

কালের কণ্ঠের দাবি, এই রিসোর্টের একটি বড় অংশই গড়ে তোলা হয়েছে বনের জমি জবরদখল করে। এতে নেপথ্যে থেকে সাহস যুগিয়েছিলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। কেননা এই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশ শেয়ারের মালিকানা বেনজীরের পরিবারের হাতে।

কালের কণ্ঠের দাবি, বনের জমি দখল করে রিসোর্ট গড়ে ওঠার সময় বেনজীর আহমেদ ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, বেনজির সুকৌশলে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

দেশের বাইরেও তিনি সম্পদ পাচার করেছেন। এ ছাড়া ঢাকা, গোপালগঞ্জ ও দেশের বাইরে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে বলে দাবি করা হয়। অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর।

গত শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় তিনি দাবি করেন, পরিবার ও তাঁর বিরুদ্ধে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তিলকে তাল বানিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘আমার ও আমার পরিবারের সম্পত্তির যেসব মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে–এগুলো যদি কোনো ব্যক্তি বা কোনো গ্রুপ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে বিনা পয়সায় হাসিমুখে সেগুলো তার নামে লিখে দেব।’ বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘গোপালগঞ্জের পারিবারিক কৃষি খামারের ভূমির পরিমাণ যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।

জমির সকল তথ্য ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া আমার পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যা আমাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্পদ নিয়ে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা বলে দাবি করেন বেনজীর।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।