শাহিনুর রহমান সোনা,রাজশাহী ব্যুরো
অল্প বয়সে মা'কে হারিয়ে স্মৃতি (ছদ্ম নাম)'র জীবনে নেমে আসে বিভিষিকাময় অন্ধকার। স্থবির হয়ে যায় স্মৃতি'র শিক্ষা জীবন। পড়াশোনা আর আগিয়ে নিতে পারেনি সে। স্মৃতি মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামের মেয়ে। অষ্টম শ্রেনীতে পা রাখতেই ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল গ্রামের এক ছেলের সাথে বিয়ে হয় স্মৃতি'র (১৪)।
বছর গড়াতেই কন্যা সন্তানের জননী হয় সে। এরপর স্বামী-স্ত্রী'র সংসারে শুরু হয় টানাপোড়ন। অবশেষে '২৩ সালে উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা হরিদাগাছী গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে রায়হানের প্রলোভনে পড়ে স্মৃতি। আকাশ কুসুম স্বপ্ন আর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মা হারা সেই মেয়ের সাথে দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে রায়হান।
এদিকে রায়হানের প্রেমে অন্ধ হয়ে স্মৃতি রায়হানের পরামর্শে তার স্বামীকে তালাক দেয় এবং রায়হানকে বিয়ের জন্য অনুরোধ করেন। পরে মেয়েটিকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বাড়ির দরজায় রেখে পালিয়ে যায় রায়হান। ঘটনা অন্যদিকে গড়াবে ভেবে (ধর্ষন মামলার ভয়ে) ধামাচাপা দিতে প্রতারণার আশ্রয় নেয় রায়হানের পরিবার।
অবশেষে কেশরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর আসলাম আলীসহ কয়েকজনের সহযোগিতায় ২৩ ফেব্রুয়ারী রাতে মেয়েটির অভিভাবক ছাড়া ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তা ২৫ ফেব্রুয়ারী নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মাত্র সত্তর হাজার টাকা দেনমোহর উল্লেখ করে নাটকীয় বিয়ের মাধ্যমে রাখা হয় রায়হানের পরিবারে।
এরপর থেকে শুরু হয় মেয়েটির উপর শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে বাড়িতে তালা বন্ধ করে সেই নারীকে স্বামী, ননদ ও শ্বাশুড়ি মিলে চালায় নির্যাতন। অবশেষে ৬ মার্চ (বুধবার) নির্যাতনের শিকার হয়ে আহতাবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।
চিকিৎসা শেষে ১০ মার্চ মেয়েটি বাদি হয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় মোহনপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিন জন আসামীর নাম উল্লেখ করা হয়। এজাহার সুত্রে জানাযায়, বিয়ের পরদিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারধোর ৫মার্চ রাত ৮ টার দিকে শয়ন ঘরে রায়হান বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়।
পরের দিন ৬ মার্চ সকালে রান্নাঘরে গেলে ননদ মনিরা খাতুন (২৪) তার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তার শাশুড়ী রোকসানা বেগম (৪৭) যৌতুকের টাকার জন্য লোহার গরম সিক দিয়ে ডান হাতের তালুতে ছ্যাকা দিয়ে পোড়া জখম করে।
তারা যৌতুকের টাকা না দিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিজের জীবন বাঁচাতে ধুরইল গ্রামে তার বাবার বাড়িতে পালিয়ে আসে। সেখানে তার ছোট ভাই সোহেল রানা'র সহযোগিতায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওসিসি-তে ভর্তি হয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন দেখা গেছে। এবিষয়ে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মন্ডল জানান, যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে, এই মর্মে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী মেয়ের পরিবারের অভিযোগ মামলার আসামিরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম অজ্ঞাত কারণে তাদের ধরছেন না। বরং মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আসামিদের জামিনে সহযোগিতা করছেন তদন্তকারি কর্মকর্তা।