আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মোঃ মাহফুজ আলী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে বসে বাংলাদেশের বৃহত্তম আমের বাজার। প্রতি আমের মৌসুমে দেশের এই বৃহৎ আম বাজারে প্রায় শত কোটি টাকার উপরে আমের বেচাকেনা হয়। আমের সময়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমে থাকে এই আম বাজার। বাংলাদেশে সব থেকে বেশি আম উৎপাদন করার "চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে বলা হয় আমের রাজধানী"।

আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মি: (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০মিটার (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আম গাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ৬মি: (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। আম গাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সে.

এই আমের রাজধানীতে রয়েছে প্রধানত কয়েক'শত জাতের আম। যেমন- ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাপাতি, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, কিষাণভোগ, মিসরিভোগ, সূর্যপুরী, তোতাপুরী, বোম্বাই, বৃন্দাবন, কুয়াপাহাড়ী, আশ্বিনা ও কাঁচামিঠাসহ বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে জলবায়ু ও মাটির গুণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের সেরা আমের ভাণ্ডার বলে সবার কাছে এখনও সুপরিচিত। বাংলাদেশের অন্য প্রান্তের আম অনুরাগীরা জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়-শ্রাবণ মধুর মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বৈচিত্র্য স্বাদ আহরণের প্রতীক্ষায় দিন গুনে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কয়েক'শত আমের মধ্যে জিআই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে খিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, আশ্বিনা, ফজলি।

খিরসাপাত (হিমসাগরঃ)- স্বাদে গন্ধে সেরা আম। এই আমের মিষ্টি সুগন্ধ ও স্বাদ পৃথিবীর অন্যান্য আমের থেকে ভিন্ন। তাই সারা পৃথিবীতে স্বাদ ও গন্ধের জন্য এই আম বাণিজ্যিক ভাবে বহুল পরিমানে চাষ করা হয়।

গোপালভোগ আমঃ- এ আমটি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে উৎকৃষ্ট জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ অন্যতম। এ আমটি একটু লম্বা ও অনেকটাই গোলাকার হয়। এর বোটা শক্ত, পাকার সময় বোটার আশেপাশে হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে, অন্য অংশ কালচে সবুজ থেকে যায়। আমটির আঁশ নেই। আমটি খেতে খুবই মিষ্টি হয়।

ল্যাংড়া আমঃ- দেশে যে কটি উৎকৃষ্ট জাতের আম এগুলোর মধ্যে ল্যাংড়া সবচেয়ে এগিয়ে। পাকা অবস্থায় হালকা সবুজ থেকে হালকা হলুদ রাং ধারণ করে। ফলের শাঁস হলুদাভ। কাঁচা অবস্থায় আমের গন্ধ সত্যিই পাগল করা। অত্যন্ত রসাল এই ফলটির মিষ্টতার পরিমাণ গড়ে ১৯.৭%। বোঁটা চিকন। আঁটি অত্যন্ত পাতলা। পোক্ত হবার পর সংগ্রহীত হলে গড়ে ৮-১০ দিন রাখা যাবে।

ফজলি আমঃ- বাজারে এখন বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো হলো ফজলি আম। নামটি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও ইদানিং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে। স্বাদ, গন্ধ ও মিষ্টতায় অন্যতম। এ আমের ফলন অন্যান্য আমের তুলনায় দেরি হয়। ফজলি আম আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়।

আশ্বিনা আমঃ- আশ্বিনা আম সাধারণত সব শেষে পাঁকে। এই আম দেখতে যেমন লম্বা তেমনি খেতে খুব সুস্বাদু। এই আম সবশেষে পাঁকে তাই এর চাহিদা ব্যাপক। বাংলাদেশের সব জায়গায় এই আম শেষে দেখতে পাওয়া যায়।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।