নিউজ ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের পর উপকূলীয় এলাকায় দেখা গেছে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। প্রবল জোয়ারে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে, কোথাও পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিভিন্ন জেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক এলাকা। এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত সাত জেলায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ে পটুয়াখালীতে ৩, সাতক্ষীরায় ১, ভোলায় ৩, চট্টগ্রাম ১, কুমিল্লা ১, বরিশালে ২ এবং খুলনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। সোমবার সকালেও দেখা গেছে প্রবল বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর বেড়িবাঁধ। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি-দোকানপাট, উপড়ে গেছে গাছপালা। ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর।
রোববার দুপুরে পটুয়াখালী কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুপু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে জোয়ারের পানিতে ভেসে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়।
দুমকির নলদোয়ানি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়। এছাড়া, বাউফলে পরিত্যক্ত ঘরে গাছ পড়ে করিম নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে দশ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত ৩৫ হাজারের বেশি। এছাড়া, সদর, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলায় বাঁধ ভেঙে চারশর বেশি পরিবার পানিবন্দী। ভেসে গেছে ২০ হাজারের বেশি মাছের ঘের।
সাতক্ষীরায় ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অনেক এলাকা। ঝালকাঠিতে প্লাবিত হয়েছে ৪ উপজেলার ২ শতাধিক গ্রাম। এছাড়া, গাছ উপড়ে রাস্তায় পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পুরো জেলা। বিদ্যুৎ নেই ভোলাতেও। এদিকে, রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত আলী মোড়ল (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান।
খুলনার দাকোপে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। সকাল হওয়ার পর নিজ উদ্যোগ মেরামত শুরু করেন স্থানীয়রা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনায় গাছের নিচে পড়ে খুলনার বটিয়াঘাটা গাওঘরা গ্রামের লাল চাঁদ (৩৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নোয়াখালীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নিঝুপ দ্বীপ, চরঘাসিয়া, ঢালচরসহ ৩ উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। এসময় কুমিল্লায় মো. সাইফুল ইসলাম সাগর নামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু হয়।
এদিকে, লক্ষ্মীপুর-ভোলা ও বরিশাল নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল ব্ন্ধ থাকায় মজুচৌধুরীহাট ঘাটে আটকে পড়েন কয়েকশ যাত্রী। এসময় ভোলায় ঘরচাপা পড়ে মনেজা খাতুন (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ভোলায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, বরিশালেও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি রোববার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আঘাত করে। এই ঝড়ের প্রভাবে গতকাল থেকে আজ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও বরিশালে মোট ১২ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।