মাদক বিষয়ে হই সচেতন, বাঁচাই প্রজন্ম বাঁচাই জীবন

সারওয়ার জাহান সুমন

মু. সারওয়ার জাহান সুমন, সভাপতি, সচেতন যুবসমাজ (একটি মাদক বিরোধী সংগঠন), রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

মাদকের ভয়াবহতা লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। ২৬ জন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। আমাদের সকলের মুখে মুখে উচ্চারিত হোক "মাদক সেবন রোধ করি - সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি"। এলাকার সুশীল সমাজ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাদকের বিরুদ্ধে আন্তরিকভাবে সোচ্চার কণ্ঠে আওয়াজ তুলে  "আমি মাদককে না বলছি - আপনারাও না বলুন"। এমন উচ্চারণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। তখন মাদক কারবারিরা ও তাদের সহযোগীরা ভয়ে সংকৃত হবে। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত পরিবার ও সমাজের জন্য মাদক হুমকিস্বরূপ। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অপরাধ ও অসামাজিক কর্মকান্ড করতে কোন দ্বিধা করে না এবং মাদকাসক্তি সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি সহ শৃঙ্খলা নষ্ট করে। পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। 

মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের সর্বাত্মক শিকারে পরিণত হয়েছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অঞ্চল মিয়ানমার, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গোল্ডেন  ট্রায়াঙ্গেলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এসব দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাদক পাচারের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিট ব্যবহার করার কারণে মাদকের বিস্তার রোধ করা কঠিন হচ্ছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটের  অনেক অংশ জুড়ে  পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমানা রয়েছে। কথিত আছে যে , ভারতের সীমান্ত ঘেঁসে অনেকগুলো অবৈধ মাদকের কারখানা রয়েছে। যা উভয় দেশের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। যেহেতু ভারত বন্ধু প্রীতম রাষ্ট্র  তাই আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের দেশের প্রজন্মকে বাঁচাতে ভারত এগিয়ে আসবে। ভারত থেকে মাদক, অবৈধ অস্ত্র, চোরাই মোবাইল বন্ধ করা না গেলে দেশের অভ্যন্তরীণ অপরাধ প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। দুই দেশের কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজের নিরাপত্তা ও বাসযোগ্য বাস্তবায়নে এর কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে কোন আপোস করা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ভুমিকা রাখা প্রয়োজন। মাদকের মত ভয়ংকর ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তি যতই ক্ষমতাবান, সম্পদশালী হোক না কেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের উচিত হবে তাদের পক্ষ অবলম্বন না করে, অর্থের লোভে না পড়ে আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় হওয়া। যেহেতু বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। এখানে কারো পিছপা হওয়ার কোন উপায় আছে বলে মনে করি না।  স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  অনেক সময় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। কখনো কখনো আবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর  অভিযান পরিচালনাও করেন। সেই সব অভিযানে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত মূলহোতারা ধরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান। যারা সেবন করেন  শুধুমাত্র তাদেরই সাজা হয়। তবে মাঝে মাঝে ব্যবসায়ী ধরা পড়েন  কিছুদিনের মধ্যে আবার বেরিয়ে এসে  তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাদের এমন দুঃসাহসিকতা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে উপজেলার কোথায় কোথায়  মাদকের ব্যবসা হয় তা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অজানা নেই। তাদের কেন কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না এর কারণ কি? 

মানুষকে মাদকাসক্তির দিকে পরিচালিত করার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, সামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেয়েমি, একাকীত্ব এবং পারিবারিক পরিবর্তনের পরিবেশে ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই করতে অক্ষমতা । তবে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃত্তির মূল কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা। এর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব জনপ্রতিনিধি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে  এবং ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশের প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত। মোট মাদকাসক্তের প্রায় ৪৮% শিক্ষিত  এবং ৪০ শতাংশ অশিক্ষিত। এতে নারীর সংখ্যাও কম নয়। শুধু শহরেই নয় গ্রামেও মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। তবুও নিজ সন্তানের  কথা ভেবেও টনক নড়ছেনা দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদের। মাদকের কালো থাবা ধ্বংস করছে পরিবারকে, একটি সমাজকে, একটি জাতিকে। নতুন আরও এক উদ্বেগের বিষয় হলো  মাদকের অপব্যবহার ও চোরাচালানের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যবহার হচ্ছে  জঙ্গি সন্ত্রাস প্রসারে  (তথ্য বিভিন্ন মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকা) মাদক প্রসারের নারী ও শিশুদের ব্যবহারও দিনদিন বাড়ছে। এর কারণ হতে পারে অর্থের অভাব ও বিলাসিতা। 

নতুন করে যেন কোন শিশু-কিশোর কিংবা উদ্বেলিত তরুণ - তরুণীরা মাদকের জালে জড়াতে না পারে। তারা যেন  কৌতুহল  কিংবা এক্সপেরিমেন্টশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে এবং বন্ধু-বান্ধব নির্বাচনে যেন  সজাগ থাকে, এজন্য মাদকের পরিনিতি সম্পর্কে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা করা উচিত। 

পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রশাসনের আন্তরিকতা খেলাধুলার পরিবেশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাড়া - মহল্লায়, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সৃজনশীল বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা সহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে অভিভাবক সমাজের ভূমিকায় অগ্রণী।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।