নিউজ ডেস্ক
ঈদের পর কাঁচাবাজারে ক্রেতা থাকে কম। পণ্যের দামও থাকে কিছু কম। প্রতিবারের এই চিত্রের ব্যতিক্রম ঘটেছে এবার। ক্রেতা কম থাকলেও দাম বেড়েছে বেশির ভাগ সবজি, মাছের। কাঁচা মরিচের দাম তো লাফাতে লাফাতে ৩০০ টাকায় পৌঁছে গেছে।
কোরবানির ঈদের পর চাহিদা কম থাকা মাংসের দামও বেড়েছে।ঈদের পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বাড়তি দাম দেখা গেছে।
একেক পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সংকটসহ একেক অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, পণ্যের কোনো সংকট নেই।
সংকট হওয়ার আশঙ্কাও নেই।বাজারভেদে গোল বেগুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুরমুখি ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, শসা ১৪০ টাকা, টমেটো ও গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, ঝিঙে ৩০ থেকে ৪০, কাঁকরোল ৪০ থেকে ৫০, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চালকুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা, এক ফালি মিষ্টিকুমড়া ৩০-৩৫ টাকায় কিনতে হয়েছে ক্রেতাকে।
কারওয়ান বাজারের আড়তের পাশে অবশ্য এসব সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা যায়। সেখানে বেগুনের দামও ছিল অন্য বাজারের চেয়ে কম। কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছেই। ঈদের আগের দিন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বাজারভেদে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ খোকন বলেন, এখন মরিচের আমদানি কম। গাড়িভাড়া বেশি। তাই দাম বাড়ছে। সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলু, পেঁয়াজ, ডিমের কোনো সংকট নেই। তবু এগুলোর দামের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
গতকাল দেশের প্রায় সব বাজারেই আলুর কেজি ৫৫-৬২ টাকা, পেঁয়াজ ৮৫-৯৫ টাকা এবং ফার্মের বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১৫০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১১৭ শতাংশ, আলুর দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশ এবং ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হওয়াকে দায়ী করছেন। ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মুরগির চড়া দাম, বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধিকে কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, পাইকার এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। রংপুরের মিঠাপুকুরের খামারি নিপুণ ইসলাম বলেন, ১৫ টাকা দরের মুরগির বাচ্চা ১০০ টাকায়ও মিলছে না।
এরপরও ২ হাজার মুরগির বাচ্চা কিনতে ছয় মাস আগে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে এখনো পাননি। এসব কারণে ডিমের দাম বেড়েছে।বাগেরহাটের ফকিরহাটের ছোট বাহিরদিয়া গ্রামের এস এম ফিরোজ আহম্মেদ, লখপুর ইউনিয়নের দীপু মিয়াসহ কয়েকজন খামারি জানান, ডিমের দাম নির্ধারণ করেন মূলত ঢাকার তেজগাঁওসহ দেশের বড় পাইকারেরা।
প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে পাইকারেরা ছোট-বড় ডিম গড়ে ৪৫-৪৭ টাকা হালি কেনেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমাগারের গেটেই চড়া দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম বেশি। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর খুচরা ব্যবসায়ী উত্তম সাহা বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হিমাগারে আলু মজুত রেখে দর বাড়ানো হচ্ছে।
পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মানুষের খাদ্যতালিকায়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের। অশীতিপর শাহ আলম সরদার ও তাঁর স্ত্রী শাহানারা বেগম কারওয়ান বাজারে সড়কের পাশে টুকরিতে করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রি করেন।
ভোরে এসে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি করে যে লাভ হয়, তা-ই তাঁদের আয়। হোটেল থেকে ভাত, ভাজি, ডিম কিনে খান। তাঁরা বলেন, বর্তমানে খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। ১০০-১৫০ টাকার নিচে এক বেলার খাবার হয় না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। সংকটের কোনো আশঙ্কাও নেই। তবু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে থাকতে পারে।
সেটা কেন হচ্ছে, তা দেখার জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে দেখা হবে, মূল্যবৃদ্ধির কারণ যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক। অযৌক্তিক হলে মজুতদারেরা দায়ী থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।