নিউজ ডেস্ক
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের হামলাকে দেশের ‘রাজনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা দেশের মানুষকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। সব রাজনৈতিক দলকেও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের হামলার পর গতকাল রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সারা দেশের মানুষকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীরা যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা সময়োচিত ও যৌক্তিক বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। জাতীয় প্রেসক্লাবে আজকের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যে আহ্বান জানিয়েছেন, আমি মনে করি সারা দেশের মানুষের সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দলেরও তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত।’ তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ জেগে উঠছে। বিশ্বাস করি, জনগণ তাদের অধিকার আদায় করে নেবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার গতকাল যা ঘটিয়েছে, তা বাংলাদেশে আমরা আগে কখনো দেখিনি। হাসপাতালের মধ্যে গিয়ে সরকারি দলের লোকজন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা আমরা কখনো চিন্তাও করতে পারি না।’
গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল শুধু আন্দোলন নয়, সন্তানদের ওপর অন্যায়ভাবে, অযৌক্তিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। কী ভয়াবহ আক্রমণ। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীই কোটা বাতিল করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য আপনারা (সরকারি দলের নেতা-কর্মী) তাঁদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিয়ে বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছেন। কী ভয়াবহ নির্যাতন করে আজকে আপনারা তাঁদের দমন করার চেষ্টা করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলমের ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এত দিন না পেড়ে এখন কেন পাড়লেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব।
গণতন্ত্রের দাবিকে পাশ কাটানোর জন্য সরকার একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন তিনি। দেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সময় রুখে দাঁড়াতে না পারলে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগ এখন আর সেই আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ একটা সম্পূর্ণ দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে আমলাদের ওপর এবং তাদের দলীয় বাহিনীর ওপর।
এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, বিএনপি নেতা নূর মুহাম্মদ খান প্রমুখ। সভার সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব আবু ইউসুফ।