এক যুগে মাছ উৎপাদন বেড়েছে ৬০ শতাংশ: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

গত এক যুগে দেশে মাছের উৎপাদন ৬০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। আজ মঙ্গলবার মৎস্য অধিদপ্তরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। 


এসময় মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘শেষ অর্থবছরে মোট মাছ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টন, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে মৎস্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায়, মাথাপিছু দৈনিক মাছ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০৩০ সালে ৬৫ লাখ ও ২০৪১ সালে ৮৫ লাখ টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মৎস্য অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত এলাকা স্থাপন, ইলিশ সংরক্ষণ, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা বিকাশে সামুদ্রিক মাছের মজুত নিরূপণ ও স্থায়িত্বশীল আহরণ, মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের ভ্যালুচেইন উন্নয়ন, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘নদীনালা, খাল, বিলে পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্য হ্যাচারি আধুনিকায়ন, খাঁচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়ানো হবে।’ 

সম্প্রতি বাংলাদেশ চীনকে টপকে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে মাছ উৎপাদনে আমরা প্রথম হতে চাই। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সামুদ্রিক মাছের অবস্থান, গতিবিধি, মজুত নিরূপণ ও আহরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার আধুনিক ট্রলার আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তা পাওয়া গেলে তাকে স্বাগত জানানো হবে এবং এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’ 

সামুদ্রিক মাছের আহরণ, বিপণন ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করতে পারলে মৎস্য খাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মন্ত্রী এ সময় মন্তব্য করেন।

সরকার মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে তাদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রায় ১৮ লাখ ১০ হাজার জেলের মধ্যে ১৫ লাখ ৮০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও অধিক দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭৪০৮ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৪৪৯৬.৩৮ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ 

অবৈধ কারেন্ট জালের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উৎপাদনকারীরা এ বিষয়ে কোর্টে রিট করায় উৎপাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সজাগ আছে এবং আইন মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।’

চিংড়িতে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কৃষি জমিতে লবণাক্ততার প্রবেশের ফলে জমির মালিকরা এখাতে জমি ইজারা দিতে চান না। এছাড়া দেশীয় বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশে চিংড়ির রপ্তানি কিছুটা কমে গেছে। তবে চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজারে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন তৈরি করার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।’

৩০ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৪ উদযাপন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।