জাবি শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল
নিউজ ডেস্ক
কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে ও দেশব্যাপী সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা৷ 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরে'র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ মিছিলে শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় কোটা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন তারা। পরে পুনরায় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনার নিন্দা জানান।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকে, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যোক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে। ৭১’র কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু স্লোগানে আমার দুঃখ হচ্ছিলো কারণ কিছু স্লোগানের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারছিলাম না। মেনে নিতে পাছিলাম না ‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’, ‘শেখ হাসিনা বাংলা ছাড়’ এই স্লোগান। আজ বলতেই হচ্ছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ৬৯ এর আন্দোলন দেখার মতো অবস্থা ছিলো না। ৭১’র যৎসামান্য বুঝেছি। আজকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় স্লোগান দেখে প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ৯০’র গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন আমাদেরকেও বাাঁচান।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীকের ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোন কথা বললে সেটি ছাত্রসমাজ গ্রহণ করবে না।আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে শহিদদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছেনা এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্রসমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহামম্দ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।