ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

নিউজ ডেস্ক

নিজেদের মাঠে এমন লজ্জা আগে কেবল একবারই হয়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেটে। অবশ্য এমন বাজে অবস্থার মাঝেও নিজেদের সমর্থকদের সামনে হোয়াইটওয়াশের লজ্জাটা পেতে হয়নি। ঘরের মাঠে সিরিজ তাদের জেতা হয়নি ঠিকই, কিন্তু সিরিজের সব টেস্টে হারতে হবে এমন সময়ও আসেনি। এবার বাংলাদেশ দিল এমনই এক লজ্জা। ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল টিম বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। শুধু পাকিস্তানই নয় বড় দলগুলোর বিপক্ষে এটির প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে নবম সিরিজ জয় এটি। বাকি আটটি সিরিজ জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ছোট দলগুলোর বিপক্ষে।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করেছিল পাকিস্তান। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেননি স্বাগতিকরা। ১৭২ রানে অলআউট হলে ১৮৫ রানের সহজ লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে উইকেট হাতে থাকতেই জয় তুলে নেই টাইগাররা। দেশের বাইরে তৃতীয় সিরিজ জয় এটি।

৫ম দিনে বাংলাদেশের আর দরকার ছিল ১৪৩ রান। আগের দিনের ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে এদিন যোগ হলো আরও ১৪ রান। দলীয় ৫৮ রানে জাকির আর ৭০ রানে ফেরেন আরেক ওপেনার সাদমান। দুই ওপেনার মিলে ১০ ওভারে রান তুলেছেন পার করেছেন ৫০ এর মার্ক। এরপরেই অবশ্য বিপত্তি। মির হামজার বলে ব্যক্তিগত ৪০ রানে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন জাকির। জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি আরেক ওপেনার সাদমান। মিডঅফে আলতো শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শান মাসুদের হাতে। খুররাম পেয়েছেন নিজের প্রথম উইকেট।

অধিনায়ক নাজমুল শান্ত আর মুমিনুল এরপর খেললেন নিখুঁত টেস্ট ইনিংস। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে শুরুতে খানিক কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকই নিজেদের খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়ক। ২০ ওভার খেলে দুজন যোগ করেন ৫৭ রান। ম্যাচটাও ততক্ষণে পাকিস্তানের নাগালের অনেকটা বাইরে।

লাঞ্চের পর শান্ত পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। সালমান আঘার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। করেছেন ৩৮ রান। দ্বিতীয় টেস্ট জিততে তখনো বাংলাদেশের প্রয়োজন এখন ৫৮ রান।

সেখান থেকে এরপর আর ফিরতে হয়নি বাংলাদেশের। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন জয়ের আরও কাছে। মুমিনুল ফিরলেও সাকিব আল হাসান এসেছিলেন জয় করতে। তাতে বাংলাদেশ আবারও পেল দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ছিল বিদেশে সিরিজ জয়ের স্মৃতি। এবার তাতে যুক্ত হলো পাকিস্তানের নাম।

গতকালের দিনটাই মূলত ভিত গড়ে দেয় জয়ের। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে হাসান মাহমুদ তুলে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ২১ রানের লিড থাকলেও ব্যাকফুটেই ছিল পাকিস্তান। ৪র্থ দিন বাংলাদেশের পেসাররা ঝরালেন আগুন। নাহিদ রানার গতির সামনে অসহায় পাকিস্তানের টপ আর মিডল অর্ডার। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং স্পেল উপহার দিলেন।

সঙ্গ দিলেন হাসান মাহমুদ নিজেও। দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান আর সালমান আঘাকে ফিরিয়েছেন। ১৭২ রানে পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে গেলে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ১৮৫ রান।

এর আগে লিটন কুমার দাস এবং মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম ইনিংসে গড়া ১৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড জুটিটাও টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পালে দিয়েছে বাড়তি হাওয়া। টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ এর আগে ৬ উইকেট হারানোর পর ৭ম উইকেটে বিশ্বরেকর্ড ১৬৫ রানের জুটি গড়েন দুই টাইগার ব্যাটার। লিটন পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। প্রথম ইনিংসের পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ গিয়েছিল ২৬২ পর্যন্ত।

১২ রানে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের ম্যাচে ফিরতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। গ্যালারিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল সিরিজের শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সিরিজ শেষে উঁচুতেই থাকলো লাল-সবুজের সেই পতাকা।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।