সন্তানদের একটি ভালো পোষাক কিংবা দুবেলা দুমুঠো ভাত ঠিকমত দিতে পারিনা - গুম হওয়া আরিফুলের স্ত্রী

মোঃ জমশেদ আলী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের আব্দুল বাসেদ মন্ডলের টোলা গ্রামের বানী ইসরাইলের ছেলে গুম হওয়া আরিফুল এর স্ত্রী মাজেরা বেগম বলেন তাঁর স্বামী গুম হওয়ার পর হতে দুইটি সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। দুটি সন্তান নিয়ে অপেক্ষায় করতে করতে  দুচোখে শুধু অন্ধকার দেখছি। সন্তানদের ভরনপোষন ও পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সন্তানদের একটি ভালো পোষাক কিংবা দুবেলা দুমুঠো ভাত ঠিকমত  দিতে পারিনা। উল্লেখ আরিফুল কে গত ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখ  আনুমানিক দুপুর পনে ৩ টার সময় কোচিং চলাকালীন সময়ে আরিফুলের বাবা ও আরিফুল বিএনপি মতাদর্শি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় জোর পূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। 


পরিবারে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। যখন আমি স্বামী হারার শোকে শোকাহত তখন বিভিন্ন অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে জিডি কিংবা মামলা না করার জন্য হুমকি প্রদান করে। 

স্বামী আরিফুল কে অনেক খুজাখুজির পর কোন সন্ধান না পেয়ে সকল হুমকি উপেক্ষা করে জিডি করার জন্য থানায় গেলে কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে আমার জিডি নেওয়াতো দূরের কথা তৎকালীন ওসি আর থানায় না আসার জন্য হুমকি প্রদান করে। তারপরও পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করার জন্য বার বার থানায় ধর্না দিলে আমাদেরও গুম করার জন্য হুমকি প্রদান করে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় গুম হওয়া স্বামী কে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে মানববন্ধনে ক্রন্দরত অবস্থায় এ করুন কথাগুলো বলেছেন মাজেরা বেগম। 

 তিনি আরও বলেন গুমা হওয়া আরিফুল এর শোকে বাবা  মোঃ বানী ইসরাইল ২০১৭ সালের ৫ আগষ্ট হঠাৎ প্যারালাইসেস হয়ে শারীরিক ভাবে কর্মক্ষমে অক্ষম হয়ে যায়। পরিবারে নেমে আসে আরও এক কালো অধ্যায়।  বানী ইসরাইল দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর অসুস্থ থেকে গুম হওয়া ছেলে  আরিফুলের শোকে ২০২২ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

 মাজেরা বেগম জানান পুত্র শোকে তাঁর শাশুড়ী  আরিফুলের মা মোসাঃ শরিফন বেগম  তিনিও পূত্র শোকে দির্ঘদিন যাবৎ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। 

মাজেরা বলেন তাঁর সন্তানেরা বার বার বাবার খোঁজ করে। সন্তানদের বুঝ দেওয়ার মতো কোন ভাষা খুঁজে পাইনা। সন্তানেরা শুধু বাবা কে খোঁজে। বিভিন্ন ঈদে যখন অন্যের বাবারা তাঁদের ছেলে মেয়েদের নতুন পোশাক কিনে দেয় আমার ছেলে মেয়ে শুধুই তাকিয়ে থাকে। করুন পরিনতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ভেঙে পড়ে মাজেরা বেগম ও তাঁর মেয়ে মাহমুদা।

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে গুম হওয়া আরিফুলকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জীবিত অবস্থায় ফেরৎ চান এবং এই গুমের সাথে জড়িতদের   বিচার দাবি করেন। গুম হওয়া আরিফুল এর সন্ধানের দাবীতে ধুলাউড়ি হাটে ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা সন্ধান চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।

মানববন্ধনে বক্তব্যে দেন আরিফুলের মা শরিফুন বেগম,দেবীনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আ ক ম সাহেদুল আলম বিশ্বাস পলাশ,দেবীনগর দ্বিমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, জেলা যুবদলের আহবায়ক তবিউল ইসলাম তারিফ,এলাকাবাসীর পক্ষে দুরুল হুদা,আরিফের ছোট ভাই সোহেল রানা,মেয়ে মাহমুদা। মানববন্ধনে ৫ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।