‘কখনো ভাবিনি ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে যাব’

নিউজ ডেস্ক

‘আমি একজন ভ্যানচালকের ছেলে। আমি মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলাম। কখনো কল্পনাও করিনি মাত্র ১২০ টাকা দিয়েই আমার চাকরি হয়ে যাবে। আমি ভাবতাম টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হয়না। নিজে চাকরি পেয়ে বুঝতে পারলাম যে টাকা ছাড়াও পুলিশে চাকরি হয়।’

রাজবাড়ীতে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়ে আবেগাপ্লুতকন্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ১ম স্থান করা রহিম বিশ্বাস।

কনস্টেবল নিয়োগের চূড়ান্তভাবে ১ম স্থান অধিকার করা রহিম বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক ভালো লাগছে, আমি একজন গর্বিত পুলিশ সদস্য হতে পেরেছি। আমি অনেক পরিশ্রম, পড়ালেখা করে নিজের মেধা দিয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছি।’

রোববার রাত ৯টায় রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্স ড্রিলসেডে টিআরসি নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন।

এতে ২৩ জন ছেলে এবং ৮ জন মেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৫ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। এ সময় চূড়ান্তভাবে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন রাজবাড়ী জেলা পুলিশ। কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুস ছাড়া পুলিশের সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারের এসব তরুণ-তরুণীরা।

এক আনন্দঘন মুহূর্ত দেখা গেছে পুলিশ লাইন ড্রিলসেডে। নিজ যোগ্যতা ও মেধায় চাকরির ফলাফল পাওয়া মাত্রই ৩১ জন তরুণ-তরুণী আনন্দে বিমোহিত হয়ে পড়েন। অনেকের নাম ঘোষণার পরপরই দুই চোখ আনন্দে অশ্রু ভিজে যায়। অনেকেই চাকরি পেয়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেন।

অপর কনস্টেবল পাংশা উপজেলা কুড়া পাড়ার বাসিন্দা মো. রিফাজুর রহমান বলেন, ‘আমি পাংশা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কনস্টেবল পদে সার্কুলার দেখে আমি আবেদন করেছিলাম। আসলে পুলিশের চাকরি একটি আবেগের চাকরি। চাকরিটা আমার খুব দরকার ছিল। পাশাপাশি আমার স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশে চাকরি করবো। চাকরিটা পেয়ে আমি খুব খুশি।’

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ কমিটির সভাপতি রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, ‘বাংলাদেশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ-২০২৪ এর কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে আজ চূড়ান্তভাবে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের তালিকা ঘোষণা করলাম। মেধাতালিকায় রাজবাড়ীতে ২৩ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী নির্বাচিত হয়েছে। যারা মনোনীত হয়েছে তারা বেশিরভাগই দরিদ্র এবং কৃষক পরিবারের সন্তান। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় কনস্টেবল নিয়োগে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছে। আমরা যারা নিয়োগ বোর্ডে ছিলাম আমরা বিশ্বাস করি এটা আমাদের ভালোলাগার জায়গা। সুন্দরভাবে এই নিয়োগটি সম্পূর্ণ করতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে।’

এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন, মুন্সিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) কাজী হুমায়ুন রশিদ, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীবসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ফলাফল ঘোষণা শেষে চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীনসহ নিয়োগ বোর্ড ও জেলা পুলিশের উর্ধ্ধতন কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, কনস্টেবল পদে রাজবাড়ীতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছিল ২ হাজার ৩৩ টি। ৩১ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১৪৯৭ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা শেষে ৩৫৭ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য সিলেক্ট হয়। এর মধ্যে ৩৫৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

এর মধ্যে ১০৭ জনপ্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তারা আজ মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে চূড়ান্তভাবে ৩১ জনকে (২৩ জন ছেলে ও ৮ জন মেয়ে) মনোনীত করে রাজবাড়ী জেলা টিআরসি-২০২৪ নিয়োগ বোর্ড ৷এ সময় অপেক্ষমাণ রাখা হয় আরও ৫ জনকে।

কপিরাইট © বিডি নিউজ লাইভ ৯৯ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।