চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা : গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’- এই প্রতিপাদ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৪ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তলন ও বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করা হয়। পরে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শহীদ স্মৃতি নামফলকের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেনÑ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সামাদ।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম, সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ, রাজশাহী বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল আবেদীন হিমেল, নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহবুবা ফেরদৌস ও হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আহনাফ আবিদ সাদ।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা মোটামুটি জানি, আমাদের কোন কোন সেক্টরে দুর্নীতি হয় এবং কিভাবে এটার প্রতিরোধ আমরা করতে পারি। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য পৃথক একটি কমিশনও আছে। তারপরও দুর্নীতির মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আমরা একসময় দুর্নীতিতে শীর্র্ষ স্থানের দিকে ছিলাম, এখন হয়তো তার থেকে একটু পিছিয়েছি। কিন্তু আসলে ভালো করে হিসাব করলে দেখা যাবে, দুর্নীতি হ্রাস তো দূরের কথা, বরং দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো বিভিন্ন আঙ্গিকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, আসলে কত বড় ফিগারের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হয়েছে। আমাদের তো আইন আছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে, পৃথক একটি সংস্থা আছে, তারপরও কেন আমরা এই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারি না। অভাবেই নাকি স্বভাব নষ্ট হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের দিকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্কেল বাড়ানো হয়েছিল, যাতে অনেকাংশেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু বাস্তবে দুর্নীতি আরো বেড়েছে, দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। দুর্নীতি বলতে শুধু ঘুষ নেয়াকেই বোঝায় না। যারাই সুযোগ পেয়ে অনৈতিক কাজ করে, সেটাকেই আসলে দুর্নীতি বলে। সাম্প্রতিককালে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা কি যৌক্তিক আছে? আমাদের সামাজিক অবস্থার কারণেই দুর্নীতি এতটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পেরেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন- দুদক আইনে অনেক কঠিন শাস্তির কথা বা আছে। একই সাথে ফৌজদারি যে কার্যবিধি, সেখানেও কিন্তু আইনের ব্যবস্থা আছে। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও কিন্তু এই দুর্নীতি কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এটার পেছনে সামাজিক অবস্থা এবং আমাদের পারিবারিক-সামাজিক যে মূল্যবোধ, এটা অনেকাংশেই দায়ী। এর জন্য ছোট থেকেই সকলকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তবে আশার কথা, এই জুলাই বিপ্লব কিন্তু আমাদের এই পরিবর্তনের একটি সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা যেটা অসম্ভব মনে করতাম, সেটা সম্ভব হয়েছে। যদি আমরা সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করি, তাহলে কেউই আর অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তে পারবে না। সেই সাথে নিজেদেরকেও পরিশুদ্ধ হতে হবে। তাই এখনই সময়, নিজেদেরকে সংশোধনের মাধ্যমে দেশ ও সমাজ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও হতে পারে বলে আমি মনে করি।
কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগঠন, স্কাউটস, রোভার, রেঞ্জার, বিএনসিসিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।