শুক্রবার, ২১শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৫
BD NEWS LIVE 99
BD NEWS LIVE 99

আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা ও লবান উৎসব উদযাপন


শাহিনুর রহমান সোনা,রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহীতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ানগালা’ ও ‘লবান’(নবান্ন) উৎসব উদযাপিত হয়েছে। গারো, শাঁওতাল, পাহাড়িরা, মাহালি, ওঁরাও এই পাঁচ সম্প্রদায় প্রতিবছর তাদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে এই উৎসবটি পালন করে আসছেন।

এ বছরও শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১০টায় নগরীর বাগানপাড়ায় অবস্থিত উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল গীর্জা প্রাঙ্গণে দেবতাদের পূজার মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান যেমন ‘আমুয়া’ ও ‘রুগালা’ পালনের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে গারো শিল্পীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় গান পরিবেশন করেন, যা উৎসবে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী ‘জুম নাচ’, যা উৎসবের পরিবেশে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে।

উৎসবের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশের ডিডি বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি বলেন,“বাংলাদেশ একটি বহু-জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই ধরনের উৎসবের মাধ্যমে জাতিগত ঐতিহ্য রক্ষায় আমাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।”

তিনি আরো বলেন,“ঐতিহ্যবাহী উৎসব ওয়ানগালা ও লবান আমাদের একতা এবং সমন্বয়কে প্রতিফলিত করে।”

রাজশাহী অঞ্চলের কারিতাস বাংলাদেশের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আরোক টপ্য বলেন, “ওয়ানগালা ও লবান শুধু আদিবাসীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ উৎসব ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডা, রাজশাহী নানকিং গ্রুপের প্রোপাইটর এহসানুল হুদা, রাজশাহী পার্লার এসোসিয়েশনের সভাপতি মিসেস রুকসানা হুদা এবং উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল গীর্জার পালকীয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্রান্সিস সরেন। তারা সবাই গারো সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

আদিবাসীদের ভাষায়, ‘ওয়ানগালা’ ও ‘লবান’(নবান্ন) উৎসব মূলত জুম চাষের সাথে সম্পর্কিত একটি উৎসব। নতুন ফসল তোলার পর নকমা (গ্রামপ্রধান) গারো সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করেন। রাজশাহীতে বসবাসরত গারোরা দীর্ঘ এক যুগ ধরে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই উৎসবটি উদযাপন করে আসছে। উৎসবের দিন গীর্জার মাঠে শতশত আদিবাসী একত্রিত হন। তারা একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে এবং নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের দোকানগুলোতে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন। জুমের আলু, কুমড়া, শামুক, কাঁকড়ার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো ছিল বিশেষ আকর্ষণ।

রাজশাহী ওয়ানগালা ও লবান উৎসব উদযাপন কমিটির নকমা লোটাস চিসিম বলেন, “ওয়ানগালা ও লবান আজ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি আদিবাসীদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার একটি অনবদ্য আন্দোলন। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এ উৎসবটি পালন করি।”

আদিবাসীদের ভাষায়, ওয়ানগালা ও লবান উৎসব তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি তাদের সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করার পাশাপাশি, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে একাত্মতার বার্তা দেয়। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার মাঝে এই উৎসব আদিবাসীদের জন্য এক ধরনের আনন্দ এবং মিলনমেলা হয়ে ওঠে। এদিনের উৎসবটি শুধু আদিবাসীদের জন্য নয়, এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক উদাহরণ হিসেবে অনেকের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠেছে।

Share:
মন্তব্য সমুহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন
আর্কাইভ

Follow Us

এলাকার খবর

ad

ফিচার নিউজ

১৩ ঘন্টা ১৮ মিনিট পূর্বে / চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা

গোমস্তাপুরে নিউ রফিক অটো রাইস মিলের উদ্যোগে শীতার্তদের…