News Desk
নৌকার প্রার্থী একে আব্দুল মোমেনের সিলেট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সিলেট-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আসছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। সিলেটের আরও একাধিক আসনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তবে একই আসনে সোমবার নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। মিসবাহ এবার সিলেট-১ ও ৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। নৌকা না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কেবল সিলেট-১ নয়, জেলার ৬টি আসনের মধ্যে কয়েকটিতেই মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন নেতা এ ব্যাপারে প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মনোনয়নপ্রাপ্তদের জন্য বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ‘ডামি প্রার্থী’রা। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেই নিশ্চিত জয়- এমন ধারণা আওয়ামী লীগের নেতাদের। এ কারণে এবার নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন বেশি। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে ডামি প্রার্থী রাখতে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌকার বিরুদ্ধে দলীয় কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে এবার শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। দলীয় প্রধানের এমন প্রশ্রয়ে এবার মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার চিন্তা করছেন। এছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একে আব্দুল মোমেন। এর আগে টানা দুই মেয়াদে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মোমেনের অগ্রজ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাধীনতার পর থেকে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত প্রার্থীর দলই সরকার গঠন করে এসেছে। ফলে এই আসনটি ভোটের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সোমবার নির্বাচন কমিশন থেকে সিলেট-১ আসনের জন্য মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। মিসবাহ টানা তিনবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিলেট জেলা জজকোর্টের পিপির দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘদিন। গত সিলেট সিটি নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপত্যাশী ছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে মিসবাহ উদ্দিন সিনাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ একজন জানান, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট-১ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা মেনে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন তিনি। সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। রোববার বিকেলে সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় সরওয়ার হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। সরওয়ার হোসেন লেখেন, ‘সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) সংসদীয় এলাকার উন্নয়ন এবং সর্বস্তরের জনগণের একজন সেবক হিসেবে পাশে থাকার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো ইনশাআল্লাহ। আমার প্রবাসী ভাইবোনসহ সকলের দোয়া চাই। ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে মানুষ ও দেশকে ভালবাসেন, আমিও সেভাবে বাকি জীবনটুকু এলাকার গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের পাশে থেকে কাটিয়ে দিতে চাই। জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। জয় হউক মেহনতি মানুষের।’ প্রবাস জীবন ছেড়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নিজ এলাকার রাজনীতিতে সংক্রিয় রয়েছেন সরওয়ার হোসেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। প্রার্থী হতে কানাডার নাগরিকত্বও ত্যাগ করেন তিনি। এছাড়া সিলেটের আরও একাধিক আসনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে তারা এখনই প্রকাশ্যে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রধানই ডামি প্রার্থী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। উদ্দেশ্য, ভোটে যেন মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে। ফলে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। তবে ডামি প্রার্থীরা নৌকার বিজয়ে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না। বরং নির্বাচনকে তারা উৎসবমুখর করবেন।’