নিউজ ডেস্ক
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘রেমাল’। এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে দেখাতে বলা হয়েছে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আজ দেশের আট বিভাগেই ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলের ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথাও বলেছে বলে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া ৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টায় পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৪০৫, কক্সবাজার থেকে ৪০০ ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দূরে ছিল। এদিকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যা থেকেই ভোলা, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় ছয় জেলাকে বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে গতকাল সকালে এক সভায় এ নির্দেশ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, ‘এ ঘূর্ণিঝড়টি যাতে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারি তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। এ সতর্কতা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো ও খালাসের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এছাড়া জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বন্দরে কার্যক্রমে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব বলেন, দ্বিতীয় মাত্রার সর্বোচ্চ সতর্কতা অনুযায়ী বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো ও খালাসের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের পণ্য ও কনটেইনার ওঠানো-নামানোর যুক্ত ক্রেনগুলো সুরক্ষিত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন করে পণ্য খালাস বা ওঠানো-নামানোর কাজ হবে না। রোববার সকাল ১০টায় জোয়ারের সময় জেটিতে থাকা সব জাহাজ সাগরে পাঠানো হবে।