নিউজ ডেস্ক
কয়েকটি ব্যাংকের দুর্বল দশা পর্যবেক্ষণ করে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ফের টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সোমবার দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি কোটি সহায়তা দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) আরও দুই ব্যাংক পেয়েছে আড়াই হাজার কোটি। প্রাথমিকভাবে ৭০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্বল দশা ঢাকতে টাকা ছাপানোসহ নানা অবৈধ সুবিধা দিয়ে অর্থলুট আড়ালের চেষ্টায় মত্ত ছিলেন তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালকদার। তবে আগস্টে সরকার বদলের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। দায়িত্বে আসেন নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। যিনি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ৫টি ব্যাংককে ভল্ট থেকে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সাড়ে ১৮ হাজার কোটি দেওয়া হয়েছে। আর মঙ্গলবার অন্য দুটো ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। মূলত আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাপক অনিয়মের কারণে চরম তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাকা না ছাপিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই অর্থ সহায়তার কথা জানালেও বাস্তবে তার সঙ্গে মিল নেই।
দায়িত্ব নিয়ে গত ২০ আগস্ট গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না।
গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, তারল্য সংকটে থাকা ‘দুর্বল’ ব্যাংককে সচল রাখতে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিয়ে গ্যারান্টির মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে নগদ টাকার ঋণ সহায়তা ব্যবস্থা করা হবে। সেই পদ্ধতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলো প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে সবল ব্যাংক থেকে। এতেও সংকট দূর না হওয়ায় টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র বলছে, সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা নিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা টাকা এবং অন্যন্য তিন ব্যাংক নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
অপর একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকগুলো কত টাকা জোগান পেলে সংকট দূর হবে, সে তথ্য জানতে চান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। পরে প্রতিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের সঙ্গে পৃথকভাবে সভা করে কোন ব্যাংককে কী পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ধারণা দেন গভর্নর। সবমিলে ৭০ হাজার কোটি টাকার চাহিদা দিয়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলো।
গত ১৯ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব ব্যাংক অর্থ সংকটের কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তাদের সহায়তার জন্য খুব শিগগির আপনারা নতুন উদ্যোগ দেখতে পাবেন।
আলোচিত ৫টি ব্যাংকসহ দেশের ১২টি ব্যাংক আওয়ামী আমলের বিভিন্ন ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে চরম তারল্য সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে আটটি ব্যাংকের মালিকানায় ছিল বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এসব ব্যাংকের অনিয়ম সত্ত্বেও শেখ হাসিনা সরকার আমলের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এতে তারল্য সংকট আরও গভীর রূপ নেয়। এসব ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিমালা ভঙ্গ করে সহায়তার অনুমোদন দেয়।