নিউজ ডেস্ক
‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ অ্যাপ প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীর আদালতে আরও চারটি মামলা হয়েছে। এই প্রতারণার ঘটনায় চারজন ভুক্তভোগী পৃথক মামলা করেছেন। এর মধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে গতকাল সোমবার। অপর মামলাটি হয়েছে গত রোববার। এ নিয়ে এই প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীতে মোট ছয়টি মামলা হলো। আগের দুটি মামলা থানায় হয়েছে।
এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারকেরা রাজশাহীর গ্রাহকদের প্রায় শত কোটি টাকাসহ সারা দেশ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নতুন চারটি মামলায় ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়াহেদুজ্জামান (৩৮), তাঁর স্ত্রী ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ জহুরা (৩২), জেলা এজেন্ট মিঠুন মণ্ডলকে (৩৬) আসামি করা হয়েছে। ওয়াহেদুজ্জামান ও ফাতেমা দম্পতির বাড়ি নগরের নওদাপাড়া এলাকায়। মিঠুন মণ্ডলের বাড়ি নগরের বোয়ালিয়াপাড়ায়।
গতকাল নগরের হড়গ্রাম নতুনপাড়া মহল্লার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (৪৩) নামের এক ভুক্তভোগী মামলা করেন রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আমলি আদালতে। একই আদালতে আরেকটি মামলা করেন হড়গ্রাম নতুনপাড়া এলাকার খাইরুজ্জামান মিয়া (৫৫) নামের এক ভুক্তভোগী। গতকাল নগরের বসুয়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আরিফ হাসান (২৮) মামলাটি করেন রাজশাহীর রাজপাড়া থানার আমলি আদালতে। একই আদালতে আগের দিন রোববার মামলা করেন ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান (৫৮)।
এই চার বাদীর আইনজীবী শামীম আকতার। তিনি বলেন, নিজাম উদ্দিনের মামলায় বলা হয়েছে যে আসামিদের প্রলোভনে পড়ে তিনি নিজে এই অ্যাপে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া মামলার ৩ জন সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন আরও ৪৫ লাখ টাকা। আরিফ হাসানের মামলায় বলা হয়েছে যে তিনি নিজে বিনিয়োগ করেছিলেন ৬০ লাখ টাকা। মামলার ৫ সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন আরও ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাদী আবদুর রহমান বিনিয়োগ করেছিলেন ১৬ লাখ। তাঁর মামলার ৭ সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর বাদী খাইরুজ্জামান মিয়ার বিনিয়োগ ছিল ১০ লাখ টাকা। তাঁর মামলার ৪ সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
আইনজীবী শামীম আকতার বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের চারটি মামলা আদালত গ্রহণ করেছেন। মামলাগুলো তদন্তের জন্য আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রতিটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন।
এই প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় গত ১৭ জানুয়ারি মোস্তাক হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী প্রথম মামলা করেন। এ মামলায় ওয়াহেদুজ্জামান, তাঁর স্ত্রী ফাতেমা ও মিঠুন ছাড়া অ্যাপের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে মৌলভীবাজারের ফারুক হোসাইন সুজন (৩৯) ও কান্ট্রি লিডার হিসেবে ঢাকার মোতালেব হোসেন ভূঁইয়া (৩৫) নামের দুজনকে আসামি করা হয়।
এরপর ২৩ জানুয়ারি ইউসুফ আলী নামের এক ভুক্তভোগী রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় আগের পাঁচজন ছাড়াও সজীব কুমার ভৌমিক ওরফে মাহাদি হাসান (৩৩) নামের একজনকে আসামি করা হয়। এই মাহাদিই প্রতারক চক্রের মূল হোতা। তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদী। মাহাদি কয়েক বছর ধরে ঢাকায় থাকেন।
প্রথম মামলাটির পর রাজশাহী মহানগর পুলিশ আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দেয়। আর মামলা হওয়ার পর ফাতেমা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। পরে তিনিই উল্টো ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আদালতে একটি মামলা করেছেন।