নাসিম আলী
নাচোলের রানী হিসাবে ইতিহাসের পাতায় পরিচিত তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নারী ইলামিত্রের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মহিয়সী এ নারীর ইতিহাস তুলে ধরতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন জেলার নাচোলে মাটির তৈরী দ্বিতল ভবনের ইলামিত্র সংগ্রহ শালা নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।
জানাগেছে,ইলামিত্রের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম নাচোলের কেন্দুয়া রাওতাড়া গ্রাম।এ গ্রামেই বসেই ইলামিত্র বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তেভাগা আন্দোলন সংঘঠিত হয়েছিল।ইতিহাসের পাতায় বিপ্লবী নারীর নাম থাকলেও বিপ্লবী এই নারীর স্মৃতি ধরে রাখতে এ এলাকায় তেমন কিছু ছিলনা। জেলায় যোগদানের পর বিপ্লবী নারী ইলামিত্রের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ইলামিত্র সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন।
১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সংগ্রামী নারী ইলামিত্র। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে আদিবাসী এলাকা নাচোলের রানী হিসেবে তাকে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তাদের আদি নিবাস ছিল ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে তারা সবাই কলকাতায় থাকতেন। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত নাচোলের রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশেই ২৬ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ইলামিত্র সংগ্রহশালাটি। বিপ্লবী এই নারীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(সাবেক)মোহাইমেনা শারমীন ইলামিত্র সংগ্রহশালাটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) সবুজ হাসানের সার্বিক দেখভালে সংগ্রহশালাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।সংগ্রহশালাটি নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শিল্পমন্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের বেলকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনটির কিছুদূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে।
উদ্বোধনের আগেই এই সংগ্রহশালাটি দেখতে দুর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছে দর্শানার্থীরা। আদিবাসী নেতা বিধান সিং বলেন,ইলামিত্র কে জানার এবং দেখার কিছু ছিলনা নাচোলে।এরকম একটি সংগ্রহ শালা নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় কে ধন্যবাদ জানাই। এবিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান বলেন,জেলা প্রশাসক স্যারের উদ্যোগে সাবেক ইউএনও মোহাইমিনা শারমিন বিপ্লবী নেত্রী ইলামিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে ইলামিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালাটি নির্মানের উদ্যোগ নেন।
স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক আমি সংগ্রহশালাটি নির্মানে সার্বিক তদারকি করি।সংগ্রহ শালাটি দেখতে ইতিমধ্যে দুর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছে দর্শানার্থীরা। নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বর্তমান) নিলুফা সরকার বলেন,বিপ্লবী নারী ইলামিত্র স্মৃতি সংরক্ষনে এবং নতুন প্রজন্ম কে সংগ্রহশালাটি ইতিহাস সর্ম্পকে ধারনা দিবে।নাচোল বাসীর জন্য এটি স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন,প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের অংশ হিসাবে বিপ্লবী নারী ইলামিত্রের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই ইলামিত্র সংগ্রহশালা নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।সংগ্রহশালাটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ইলামিত্র সংগ্রহশালাটি সবার জন্য উনমুক্ত করা হবে।এ জেলার মানুষ সংগ্রহশালার মাধ্যমে ইলামিত্রের স্মৃতি ধরে রাখবে।