নিউজ ডেস্ক
রাজশাহী শহরে বাড়ছে ধূলিকণা। গত তিন বছরে বাতাসে ধূলিকণা বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। ফলে নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে শনিবার (৩০ নভেম্বর) নগরের পাঁচটি স্থানে বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। সংস্থাটি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ পরীক্ষা চালায়। পরে বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফলাফল জানানো হয়।
সংগঠনটির দেওয়া তথ্যমতে, রাজশাহী নগরীর ২০২২ সালের ৫ মার্চ পরিমাপ করা হয় বাতাসের ধূলিকণার মাত্রা। ওই সময় দেখা যায়, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৭৬ এবং ৮৫ মাইক্রোগ্রাম রেলগেট এলাকায় ৭৩ ও ৮৪ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠ পুকুর এলাকায় ৫৬ ও ৬৮ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৭১ ও ৮০ মাইক্রোগ্রাম এবং সাহেব বাজার এলাকায় ৫৫ ও ৬৬ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর সংগঠনটি আবারো বাতাসের বায়ুদূষণের মাত্র নির্ণয়ে সেই ৫ স্থানে পরিমাপ করে। এসময় দেখা যায়, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৯৭ এবং ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, রেলগেট এলাকায় পাওয়া যায় ৯৩ ও ২৩১ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, বিসিক মঠ পুকুর এলাকায় ৭৬ ও ২২২ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৯৪ ও ২২৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং সাহেব বাজার এলাকায় ৮৮ ও ২২৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।
সবশেষ শনিবার আবারো সেই ৫ স্থানে পরিমাপ করা হয়। এসময় দেখা যায়, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ১০৬ এবং ১৩০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, রেলগেট এলাকায় পাওয়া যায় ১২৫ ও ১৯০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, বিসিক মঠ পুকুর এলাকায় ৯০ ও ১১৭ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৬৪ ও ৯৩ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং সাহেব বাজার এলাকায় ৭১ ও ১০৩ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।
ফলে দেখা যায়, ২০২২ সাল সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের মাত্র ছিল পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৭৬ এবং ৮৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।
২০২৩ সালে সেটি বেড়ে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ পাওয়া যায় তালাইমারী মোড়ে যথাক্রমে ৯৭ এবং ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। সবশেষ ২০২৪ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ রেলগেট এলাকায় পাওয়া যায় ১২৫ ও ১৯০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। ফলে গত তিন বছরে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ বায়ুদূষণ বেড়েছে ৪৭ মাইক্রোগ্রাম। যা শতাংশে ৬৪.৪৭ শতাংশ।
রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে শনিবারের পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন পিএইচডি গবেষক ও সংস্থাটির কোষাধ্যক্ষ অলি আহমেদ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী ও সংস্থার সভাপতি মো. জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ, সদস্য শামসুর রাহমান প্রমুখ।
সংস্থাটির সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, বায়ু পরীক্ষায় সব স্থানেই বায়ুর মান তুলনামূলক খারাপ পাওয়া গেছে। এ ধরনের বায়ু মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। রাজশাহী শহরে অনেক নির্মাণকাজ চলছে। এ কারণেও দূষণটা একটু বেশি। আমাদের পরীক্ষায় গত ৩ বছরে প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি বায়ুদূষণ ধরা পড়েছে। এখনই সচেতন না হলে এটি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, নির্মাণকাজ পরিচালনার জন্য কতগুলো নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে। সেগুলো মেনে চললে দূষণটা কমানো যেত। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপাদান ঢেকে রাখা, নির্দিষ্ট সময় পরপর পানি ছিটিয়ে দেওয়া, নির্মাণসামগ্রী বহনের সময় ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে। কিন্তু এগুলো মানা হচ্ছে না। এছাড়া আগের তুলনায় রাজশাহীতে বড় গাছের সংখ্যা কমেছে। গাছ বেশি বেশি লাগানো ও পুকুর না ভরাট করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, রাস্তার নির্মাণ কাজের জন্য এসব ধূলিকণা সৃষ্টি হয় এটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের যে সকল কাজ চলছে সেখানে তিনবেলা করে পানি দেওয়ার নিয়ম আছে। যদি না দেওয়া হয় তবে স্থানীয়রা আমাদের জানাবে।