শাহিনুর রহমান সোনা,রাজশাহী ব্যুরো
অবৈধ দখলদার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ১০ বছর আইনী লড়াই করে সুপ্রীম কোর্টের রায় পেয়েও দায়িত্ব বুঝে পাননি রাজশাহী হোমিও প্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা: সায়েরা বানু। প্রশাসনের গড়িমসি এবং দায়িত্বরত অধ্যক্ষের আওয়ামী শক্তি, সাথে ঘুষের প্রভাবে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী সায়েরা বানু'র।
ডাঃ সায়েরা বানু ১৫ সালের ৩০ এপ্রিল রাজশাহী হোমিও প্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল'র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু তৎকালিন সভাপতি ও জেলা প্রশাসক তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অনুমোদন না দিয়ে বিধি বহির্ভূত ভাবে ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর বিধি বহির্ভূত অবৈধ নিয়োগ উল্লেখ করে সায়েরা বানু হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিয়োগের বিরুদ্ধে একই বছর ১০ মে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ডাঃ আনিসুর রহমান সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিল বিভাগ ১৫ সালের ২১ জুন আপিলটি খারিজ করে দেন এবং ১০ মে ২০১৮ সালে হাইকোর্ট ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগকে অবৈধ ঘোষনা করে পূর্নাঙ্গ রায় প্রদান করেন। এই রায়ের কপি তৎকালীন জেলা প্রশাসকে প্রদান করলে তিনি তা বাস্তবায়ন না করে সময় ক্ষেপন করেন এবং ডাঃ আনিসুর রহমানকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করতে সুযোগ করে দেন। সেই আপিলটিও এবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
এদিকে, অবৈধভাবে প্রভাষক পদ থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে নিয়মিত অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন ডা: মো: আনিসুর রহমান। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের কপি সংযুক্ত করে বর্তমান জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বরাবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়ে গত ২ মার্চ আবেদন করেন ভূক্তভোগী ডা: সায়েরা বানু। আবেদন করার পরও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে জেলা প্রশাসন কালক্ষেপন করছেন বলে অভিযোগ করেন সায়েরা বানু।
জানা যায়, আদালতে মামলা চলাকালীন ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড তাকে প্রভাষক পদ থেকে সরাসরি পদোন্নতি দিয়ে অধ্যক্ষ পদে বসান। অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়ে আর থামতে হয়নি ডা: আনিসুর রহমান'কে । তিনি হোমিওপ্যাথিক কলেজের উন্নয়নের দিকে না তাকিয়ে করতে থাকেন অনৈতিক আর অবৈধ সব কাজ৷ সাথে বাড়তে থাকে তার অবৈধ সম্পদ আর ক্ষমতার অপব্যবহার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়ার জন্য অগ্রীম ৫ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে। ২ জন অনারারি শিক্ষককে নিয়মিত করণের জন্য ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি। কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ীকরনসহ নানা অজুহাতে হাতিয়ে নিয়েছেন আরও লাখ লাখ টাকা।
বিল্ডিং সংস্কার, নতুন ছাদ ঢালায়ের মাধ্যমে লোপাট করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার এসব কাজের ইঞ্জিনিয়ারিং এর টাকাও ঢুকেছে তারই ঘরে, কারণ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন তার বাবা আবুল কাশেম।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট তোলা, ইন্টার্নশিপ না করিয়ে সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা।
বিগত আওয়ামী সরকারের দোসর হয়ে নানা অপকর্ম , সাবেক মেয়র লিটনের নানা অনৈতিক ও রাজনৈতিক কাজে টাকা প্রদান ; হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নাই, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু লেখা পোস্টার করে ফেসবুক সহ বিভিন্ন জায়গায় টাঙ্গিয়ে রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কথা বললে রাজশাহী হোমিও প্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দায়িত্বরত অধ্যক্ষ ডা: আনিসুর রহমান বলেন, "১৫.৪.২০১৫ তারিখের বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদানকারী ব্যক্তি হলেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। ইয়াসিন আলী যেহেতু প্রথমেই ডা: সায়েরা বানুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েছে এটা আইনগতভাবে অনিয়ম। দ্বিতীয়ত আমি এখন বোর্ডের নির্দেশ মোতাবেক, রেগুলেশন মোতাবেক সিলেকশন কমিটি অনুযায়ী ২০২২ সাল থেকে নিয়মিত অধ্যক্ষ হিসেবে এখানে বর্তমান"।
এ বিষয়ে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাপতি ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার'র সাথে সরাসরি ও মুঠোফোনে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।