নিউজ ডেস্ক
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। সফটওয়্যার রপ্তানির মাধ্যমে যে আয় হয় তা জিডিপির ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু তা সত্বেও দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রপ্তানি আয় বাড়ছে না। তিন বছর ধরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি শূন্য। ২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার হলেও তা পূরণ হয়নি। পরে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
তবে সেটির লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টদের। এখন নতুন লক্ষ্য হতে পারে ২০৩১ সাল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করলেই হবে না, সেটি পূরণ করতে হলে অনেক কাজ করতে হবে। জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি হয় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। ফলে আর এক বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের অবশিষ্টাংশ আয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সফটওয়্যার রপ্তানিতে সরকার ঘোষিত ১০ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েও তেমন কোনও কাজ হয়নি। সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়েনি কাক্সিক্ষত পরিমাণে। এছাড়া প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণ, পণ্য সরবরাহ সহজলভ্য করতে বিনিয়োগ আকর্ষণসহ নানান উদ্যোগের পরও এ খাতে রপ্তানি বাড়ছে না। সরকারের ২০১৬ সালে প্রকাশিত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে পণ্য রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা জানানো হয়েছিল।
এ সময়ের মধ্যে ২০ লাখ আইসিটি পেশাজীবীও তৈরি করার পরিকল্পনা জানানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের রপ্তানির কোনও টার্গেটই পূরণ করা যায়নি। ২০২১ সালে প্রণীত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে আবারও ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে আইসিটি পণ্য রপ্তানি হয়েছে বছরে গড়ে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার তথা ১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করা হয়।
বেসিস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রপ্তানি শুরু করে। ওই বছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ডলার। ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এরপর ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার ও ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সফটওয়্যার রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে সফটওয়্যার রপ্তানি দাঁড়ায় সাড়ে চার কোটি ডলারে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার রপ্তানি থেকে আয় প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে।
ওই অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই আয় বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। এদিকে এখাতে সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্যের নির্মাতা ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বেসিস-এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ২০২৫ সাল ভুলে গিয়ে ২০৩১ সালকে লক্ষ্য করে এগোতে হবে। যেটুকু ভালো করেছি সেটুকুর জন্য আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না। লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেই হবে না, সেটা অর্জন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব ভুলভ্রান্তি রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি মনে করেন, লক্ষ্যপূরণের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ না পাওয়া ও কিছু নীতি নির্ধারণী সমস্যা। এগুলো ঠিক করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।