মোঃ জমশেদ আলী
নিউজ ডেক্সঃ
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দ্বিতীয় জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করব সেই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। প্রায় দশ হাজারের মত ক্লিনিক আমরা নির্মাণ করি, চার হাজার আমরা চালু করি। এক বছরের মধ্যে এর সাফল্য পায় ৭০ ভাগ। মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কারণ বিনা পয়সা সেখানে ওষুধ দেওয়া হয়। “দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আসতে পারেনি। তখন বিএনপি ক্ষমতা আসে। প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া, সাথে সাথে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।” শেখ হাসিনা বলেন, “২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি, জনগণের সেবার সুযোগ পাই। তখন থেকে আমাদের চেষ্টায় এদেশের মানুষকে, বিশেষ করে তাদের স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, এটা জাতির পিতাই শুরু করেছিলেন।" দেশে বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার বিকাশে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "আমাদের দেশে যাতে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে ওঠে, তার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালের সকল যন্ত্রপাতির উপর ট্যাক্স, বিশেষ করে শিশুদের চিকিৎসার জন্য ট্যাক্স একেবারে শূন্য করে দিই। বেসরকারি উদ্যোক্তা যাতে সৃষ্টি হয়, তাদেরকে উৎসাহিত করি। তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আমরা করে দিই। যার জন্য সারা বাংলাদেশে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। "বাংলাদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সারাটা জীবন আমার বাবা সংগ্রাম করেছিলেন। সে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছি। তার সেই স্বপ্নপূরণ আমার একমাত্র লক্ষ্য।" জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেন, "কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করা যে সম্ভব, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমাদের জ্ঞান অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করব। আমরা কী কী কাজ করেছি, সেগুলো প্রচার করার সুযোগ আমরা পাচ্ছি। প্রথমবার যখন আমরা সরকারে আসি, তখন স্বাস্থ্য সেবার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিই। "৯৬ সালে সরকারে এসে বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ইনস্টিটিউটগুলো আমরা প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। তার কার্যক্রম শুরু করি।" ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আবার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার দিকে সব থেকে বিশেষ নজর দেয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এর ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছি। আমি ধন্যবাদ জানাই জাতিসংঘকে, জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ, তাদের সকলের সম্মতিতে কমিউনিটি ক্লিনিককে সার্বজনীক স্বাস্থ্য সেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগণমূলক পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চিন্তাটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ছিল। এটা আমি নিজেই লিখেছিলাম।” কীভাবে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণা নিয়ে কাজ শুরু হল, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন। "আমাদের স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন মোহাম্মদ আলী সাহেব, তার বাড়ি নরসিংদীতে, আমি তাকে বলি যে আমার এ ধরনের একটা ধারণা আছে,এটা কার্যকর করা যায় কিনা, যারা বিশেষজ্ঞ তাদের নিয়ে যাচাই করে দেখবেন। “প্রায় ছয় মাসের উপরে তিনি এটা নিয়ে কাজ করেন। এটা নিয়ে আলোচনায় হয়, তারপরে আমরা এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সবগুলো থেকেই মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়।" শেখ হাসিনা বলেন, "ইতোমধ্যে আমরা পোলিও নির্মূল করেছি। মা ও শিশুর মৃত্যুহার আমরা হ্রাস করেছি। টিকাদানে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। টিকাদান কার্যক্রম সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এ অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খেয়েছে, আমরা যথাযথ ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে… কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমরা সবকিছু বিনা পয়সা করে দিয়েছি।” বাংলাদেশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলের অঙ্গীকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর লেপ্রোসি ইন বাংলাদেশ ২০২২ টু ২০৩০’ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, "আমি দেখেছি, অনেক কুষ্ঠ রোগী মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একটা সুর করে করে তারা ভিক্ষা চাইতে আসত। যে কোনো অকেশনে তারা আমার কাছে আসত। আমি তাদেরকে কখনো অবহেলা করিনি। তারা এলে তাদেরকে বসাতাম, তাদেরকে খাদ্য দিতাম। তাদেরকে আমি নগদ টাকা দিয়েও সহযোগিতা করতাম। আমি তাদের কথা দিয়েছিলাম যে, আমি সরকারে যেতে পারলে তাদের জন্য ব্যবস্থা করব। সে ব্যবস্থাটা আমি করেছি। কারণ, তারা এক ধরনের প্রতিবন্ধী জীবন যাপন করে। "আমি সকল স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্স, বিভাগ, সংস্থা, সেই সাথে সকল নাগরিককে কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবহেলা না করে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, আরো যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানাই।" শেখ হাসিনা বলেন, "এরা আমাদের সমাজের অংশ, পরিবারের অংশ। একটা বাচ্চা শিশু যদি হিজড়া বা প্রতিবন্ধী হয়, তার বাবা-মা ফেলে দিতে পারে না। ফেলে দেওয়া উচিত না। আমরা কেন ফেলে দেব? তারা সম্পদেরও অংশীদার, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মেও আছে। কুষ্ঠ রোগ চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।" স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া, স্বাস্থ্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।