মোঃ জমশেদ আলী
নিউজ ডেক্স
শরীরে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বুঝবেন আপনার শরীরে “ভিটামিন-বি ”এর অভাব রয়েছে। সাধারণত অতিরিক্ত চুল পড়া এবং চুল অল্প বয়সে পেকে যাওয়া “ভিটামিন-বি ”এর অভাবজনিত একটি লক্ষণ এর পাশাপাশি হাতে পায়ে নিয়মিত ঝিঝি ধরা ‘ভিটামিন-বি ’ কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত একটি লক্ষণ। এছাড়াও ঠোঁটের কোনায় ঘা হওয়া এবং মুখের ভেতরে ঘা হওয়া যার কারণে অতিরিক্ত মুখে লালা জমা ইত্যাদি “ভিটামিন-বি ”কমপ্লেক্সের অভাবজনিত রোগ। এছাড়াও পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া ‘ভিটামিন-বি’ কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত রোগ। ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স আমাদের শরীরে নানাভাবে কাজ করে। ১. ভিটামিন-বি ১: ভিটামিন বি ১ কে থায়ামিন নামেও ডাকা হয় এবং এই ভিটামিন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের শর্করা কে অংশগ্রহণ করে শক্তিমুক্ত করে। স্বাভাবিক ক্ষুধা বজায় রাখতে ভিটামিন বি১ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে এই ভিটামিন আমাদের জন্য উপকারি একটি ভিটামিন। ২. ভিটামিন-বি ২: এটি এমন একটি উপাদান যার মাধ্যমে আমাদের শরীরে থাকা এমাইনো এসিড ও ফ্যাটি এসিড এর সঙ্গে কার্বোহাইডেট বিপাকে অংশ নিয়ে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে এই ভিটামিন। এর পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি গ্যাস ও অম্বলের প্রকোপ কমাতে ও ব্লাড সেল এর সংখ্যা বৃদ্ধির সাহায্য করে ভিটামিন বি ২। ৩. ভিটামিন-বি ৩: হার্টের সমস্যা থেকে বাঁচতে এই ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন বি ৩ আমাদের শরীরে উপস্থিত থাকলে এটা বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ভাসকুলার ডিসঅর্ডার এবং শ্বাস জনিত সমস্যা কে দূরে রাখতে সহায়তা করে। ৪. ভিটামিন-বি ৫: শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এ ঘাটতি দূর করতে নিয়মিত ভিটামিন বি ৫ আমাদের খেতে হবে এবং আমাদের শরীরের কোষের গঠনের জন্য ভিটামিন বি ৫ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৫. ভিটামিন-বি ৬: আমাদের শরীরে এ ভিটামিনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে এবং শক্তি উৎপাদনে এই ভিটামিন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আমাদের শরীরে থাকা প্রায় ১০০ ধরনের এনজাইম রিঅ্যাকশন যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখে। ৬. ভিটামিন-বি ৭: সুস্থ বিপাকক্রিয়ার জন্য দরকার ‘বায়োটিন’ বা ‘ভিটামিন বি সেভেন’। ত্বক, স্নায়ু, হজমতন্ত্র, বিপাকক্রিয়া এবং কোষ এই উপাদানটি থেকে উপকৃত হয়। শরীরে ‘ফ্যাটি অ্যাসিড’ ও শর্করা তৈরির জন্য ‘বায়োটিন’ প্রয়োজন। এই উপাদানগুলোই শরীরের কর্মশক্তি হিসেবে ব্যবহার হয়।” ৭. ভিটামিন-বি ৯: সুস্থ ও স্বাভাবিক গর্ভধারণ ও গর্ভাবস্থার জন্য ভিটামিন বি নাইন বা ফোলাট খুবই জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড অ্যাট দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে ডা. সুথার্বি পরামর্শ দেন, “সন্তান ধারণ করতে পারবেন এমন বয়সে পা দেয়ার পর প্রতিটি নারীর উচিত প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড বা ফোলাট গ্রহণ করা।” গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রতিদিন দরকার ৬০০ থেকে ১০০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড। গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক ও ‘স্পাইনাল কলাম’য়ের সুস্থ গঠনের জন্য এই উপাদান দরকার। তাই গর্ভধারনের আগে ও পরে এই উপাদান পর্যাপ্ত সরবরাহ শরীরে থাকলে সন্তান প্রসবজনীত অস্বাভাবিকতা থেকে সুরক্ষা মিলবে। ৮. ভিটামিন-বি ১২: স্নায়ুর জন্য দরকার এই ভিটামিন। স্নায়ু আর মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজের কাজি হল ভিটামিন বি টুয়েলভ। বস্টনের ‘হার্ভার্ড টি. এইচ চ্যান অফ পাবলিক হেল্থ’ জানাচ্ছে, “ভিটামিন বি টুয়েলভ বা কোবালামিন প্রাকৃতিকভাবে মেলে প্রাণিজ খাবার থেকে। ‘সাপ্লিমেন্ট’ হিসেবেও গ্রহণ করা যায় এই উপাদান। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর সকল কাজের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি।” ভিটামিন-বি যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ওটস, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার, শিম ও মটরশুটি, মাশরুম, বাদাম ও বিভিন্ন প্রকারের বীজ, আস্ত শস্য, সবুজ শাক সবজি (পালং শাক), কলা, আভোক্যাডো, গুড়, মধু ইত্যাদি।