নিউজ ডেস্ক
আপনার কি মনে হচ্ছে আপনার সন্তান কথা বলতে পারছে না? অথবা তার কথা বুঝতে কি আপনার অসুবিধা হচ্ছে? তাই হয়তো ভাবছেন, স্পিচ থেরাপি শুরু করা উচিত কিনা।
তার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, শিশুর দেরিতে বা বিলম্বে কথা বলার লক্ষণগুলো কী কী।
ভাষা বিলম্বের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ১৫ থেকে ১৬ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো বোল বলছে না।
২. ২ বছর বয়সে কথা বলছে না।
৩. ৩ বছর বয়সে সংক্ষিপ্ত বাক্য দ্বারা কথা বলতে অক্ষম।
৪. নির্দেশাবলি অনুসরণ করতে তার অসুবিধা হচ্ছে।
৫. দুর্বল উচ্চারণ।
৬. শব্দ সাজিয়ে একটি বাক্য গঠন করতে অসুবিধা হচ্ছে।
৭. বাক্য থেকে অর্থবহ শব্দ বাদ দিচ্ছে।
কারণসমূহ
শিশুদের ভাষায় বিলম্বের সম্ভাব্য অনেক কারণ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে একের অধিক কারণে ভাষা বিলম্ব হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে:
শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা: শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন শিশুদের মধ্যে ভাষা প্রতিবন্ধকতাও লক্ষ্য করা যায়। যদি তারা ভাষা শুনতে না পারে, তবে কীভাবে যোগাযোগ করতে হয় সেটি শিখতেও অসুবিধা হতে পারে।
অটিজম: অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত ভাষার বিলম্ব না থাকলেও অটিজম প্রায়শই যোগাযোগকে প্রভাবিত করে।
বুদ্ধিগত অক্ষমতা: বিভিন্ন বুদ্ধিগত অক্ষমতা ভাষা বিলম্বের কারণ হতে পারে। যেমন, ডিসলেক্সিয়া এবং অন্যান্য শিক্ষার অক্ষমতা কিছু ক্ষেত্রে ভাষা বিলম্বিত করে।
মনো-সামাজিক সমস্যা: এগুলো ভাষা বিলম্বের কারণও হতে পারে। যেমন, তীব্র অবহেলা ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
একজন স্পিচ থেরাপিস্ট কীভাবে আপনার শিশুকে সহায়তা করবেন?
স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্ট বা স্পিচ থেরাপিস্ট একজন প্রশিক্ষিত এবং কমপক্ষে একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী। একজন স্পিচ থেরাপিস্ট নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সহায়তা করে থাকেন:
স্পিচ/উচ্চারণগত সমস্যা: উচ্চারণের ধরন ও স্পষ্ট উচ্চারণ।
ভাষাগত সমস্যা: শব্দ ও বাক্য লিখিত এবং মৌখিক ভাষা বোঝা।
সামাজিক যোগাযোগে বিশৃঙ্খলা: মৌখিক এবং অ-মৌখিক যোগাযোগের সামাজিক উপাদানগুলো বোঝা।
জ্ঞানীয়-যোগাযোগ ব্যাধি: মনোযোগ দেওয়া, পরিকল্পনা করা এবং সমস্যা সমাধান করা।
এটি কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসার মূল্যায়ন করার পরে, আপনার সন্তানের চিকিৎসক আপনাকে একটি স্পিচ-থেরাপিস্ট বিশেষজ্ঞকে দেখানোর জন্য বলবেন। আপনার সন্তানের ভাষার কোনো বিলম্ব আছে কিনা, তা নির্ধারণ করতে তারা আপনার সন্তানের অভিব্যক্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য ভাষার একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন করবেন। পরীক্ষায় মৌখিক এবং লিখিত যোগাযোগের ওপর মনোনিবেশ করে প্রমিত ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ভাষণ এবং ভাষার মূল্যায়ন শেষ করার পরে, স্পিচ-থেরাপিস্ট অন্যান্য পরীক্ষা করানোর জন্য সুপারিশ করতে পারেন। যেমন– শ্রবণ পরীক্ষা যা শিশুর শ্রবণশক্তি আছে কিনা, তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।
ডায়াগনোসিস করানোর পর আপনার সন্তানের চিকিৎসা পরিকল্পনায় স্পিচ-থেরাপিস্টকে যুক্ত করুন। স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্ট বা স্পিচ থেরাপিস্ট আপনার শিশু যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা নির্ধারণের জন্য একটি মূল্যায়ন সম্পূর্ণ করবে। এই তথ্যগুলো তাদের চিকিৎসা পরিকল্পনার বিকাশ ও প্রয়োগ করতে সহায়তা করবে।
যদি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যগত অবস্থার অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে চিকিৎসক অন্যান্য চিকিৎসারও সুপারিশ করতে পারেন। যেমন- তারা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারা মূল্যায়নের প্রস্তাব দিতে পারেন।
ভাষা বিকাশের কিছু উপায়
সমস্ত ভাষার বিলম্ব রোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা এবং শেখার অক্ষমতা সর্বদা প্রতিরোধযোগ্য না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে আপনার সন্তানের ভাষা বিকাশের জন্য এই টিপসগুলো অনুসরণ করুন:
১. আপনার সন্তানের জন্মের সময় থেকেই তার সঙ্গে কথা বলুন।
২. আপনার সন্তানের আধো আধো বোলে সাড়া দিন।
৩. শিশুকাল থেকেই আপনার সন্তানের সঙ্গে গান করুন।
৪. আপনার সন্তানের সাথে উচ্চস্বরে পড়ুন।
৫. আপনার সন্তানের প্রশ্নের উত্তর দিন।
যদি আপনার শিশু দেরিতে কথা বলে বা বেশি কথা বলতে না চায়, তবে কোনো কাজ করার সময় একটি নির্দিষ্ট শব্দের ওপর জোর দিন এবং বারবার সেই শব্দটি তার কানের কাছে বলুন। যেমন– খেলার সময় ‘খেলা’ শব্দটির ওপর বেশি জোর দিতে পারেন। আবার ‘খাওয়া’ ‘গোসল করা’ এই শব্দগুলো বারবার বলে শিশুকে বোঝাতে পারেন।