নিউজ ডেস্ক
জনবল সংকটে দেশের সর্ববৃহৎ এবং ব্যস্ততম ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান ব্যাহত হচ্ছে। রোগীর অনুপাতে চিকিৎসক স্বল্পতা, তথ্যপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি, রোগী ভর্তিতে হয়রানিসহ নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেবা নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত রোগীরা।
রোগীদের কেউ বলছেন- চিকিৎসকের সেবার মান ভালো, কেউ বলছেন- চিকিৎসক সময় নিয়ে রোগী দেখেন না। অনেকের মতে, তথ্যপ্রাপ্তিতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া রোগী ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে নানান হয়রানির শিকার হচ্ছেন স্বজনরা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) ঢামেক হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ ভোগান্তির চিত্র পাওয়া যায়। হাঁটুর সমস্যা নিয়ে সিলেট থেকে এসেছেন সেলিম মিয়া (৩৫)। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় বাম হাঁটুতে আঘাত পেয়েছি। সেখানে অপারেশন করাতে হবে। সকাল থেকে বসে আছি, চিকিৎসক নেই। শুনলাম চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারে থাকায় বহির্বিভাগে সময় দিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, সিলেট মেডিকেল থেকে এখানে রেফার করা হয়েছে। আজ ১৫ দিন ধরে ভর্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। চিকিৎসক ভর্তি দিয়েছেন, কিন্তু রেসিডেন্সিয়াল সার্জন (সার্জারি) বলছেন বেড খালি নেই।
তথ্যপ্রাপ্তির ভোগান্তি নিয়ে কথা হচ্ছিল কেরানীগঞ্জ থেকে আগত মেহজাবীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাকে নিয়ে নাক কান ও গলা (ইএনটি) বিভাগে এসেছি। তবে সঠিক তথ্যপ্রাপ্তিতে অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি। প্রথমত অনেক ভিড়, তার ওপর তথ্যকেন্দ্রে গেলে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায় না। এক ভবন থেকে আরেক ভবনে পাঠায়। এক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করলে আমাদের খুব সুবিধা হতো।রাজধানীর জিগাতলায় থাকেন ব্যবসায়ী আলাক হোসেন। ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগে (সার্জারি) এসেছেন ছোট একটি অস্ত্রোপচার করাতে। তিনি বলেন, সেবার মান ভালোই। তবে টিকিট কাটা, লাইনে দাঁড়িয়ে রোগী দেখানোর ক্ষেত্রে একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পিজি হাসপাতাল বন্ধ থাকায় ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগে এসেছেন সেলিনা (৪২)। তিনি জানান, টাঙ্গাইল থেকে শুক্রবার এসে দেখি পিজি হাসপাতাল বন্ধ। এখানে এসে সকাল থেকে বসে আছি সিরিয়ালের জন্য। কিন্তু চিকিৎসক সময় নিয়ে সমস্যার কথা শোনেন না। আবার সহসা ভর্তি করাতে চান না। জরুরি ভর্তির রোগীকেও অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হয়।কথা হলে সার্বিক বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা দুই হাজার ৬০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ৪ হাজারের অধিক রোগীকে সেবা দিচ্ছি। জনবলের ব্যাপক ঘাটতি আছে। এক্ষেত্রে যথাযথ সেবার মান বজায় রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বহির্বিভাগে প্রায় ৭০ জন চিকিৎসক বসেন। জরুরি বিভাগে আমাদের সব মিলিয়ে ১৫ জন চিকিৎসক থাকেন। এখানে সব রোগীই গুরুতর অবস্থায় আসেন। সেই অনুপাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তাই সবাইকে একই ধরনের সেবা দিতে হয়।তিনি বলেন, সরকার থেকে জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
২০১৩ সালে নতুন ১০তলা ভবন চালু হলেও সেখানে কোনো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেওয়া হয়নি। বিদ্যমান জনবল নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে অবসরে যাচ্ছে তাদের স্থলে নতুন নিয়োগ হচ্ছে না।কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের ২৬০ জনের শূন্যপদ আছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর পর তারা বলছে, যে ২০১৮ সালের নিয়োগৎবিধির পর অনেক পদ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে নতুন লোক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। আবার বিধি অনুযায়ী মোট নিয়োগের ১০ শতাংশ পদ খালি রাখতে হয়। ফলে নতুন বিধি মোতাবেক ৬৫টি শূন্যপদ থাকলেও আমাকে ৫৭ জনের বিজ্ঞপ্তি দিতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবো।এ ধরনের নীতিনির্ধারণী সমস্যার কারণে আমাদের সেবার মান বজায় রাখতে সমস্যা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নিয়োগ বিধির জন্য আমাদের পাশাপাশি সারাদেশে সবক্ষেত্রে নিয়োগ আটকে আছে। ফলে মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।