চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ অক্টোবর থেকে কিশোরীরা পাবে জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
জরায়ুমুখ ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছেনারীদের জরায়ু মুখে ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) বিরুদ্ধে এক ডোজ টিকাই যথেষ্ট। ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা ব্যতীত দেশের ৭টি বিভাগে শুরু হতে যাচ্ছে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন।১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মোট ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে বিনা মূল্যে এ টিকার আওতায় আনতে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।>চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পর্যায়ক্রমে ৮৯ হাজার ৬ শত ৯১ কিশোরীকে বিনামূল্য টিকা দেওয়া হবে। টিকা দিতে কিশোরীদের রেজিষ্ট্রেশন করার পরামর্শ দেন মতবিনিময় সভায় বক্তরা।এ উপলক্ষে বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের হলরুমে সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নেতৃত্বে এই কর্মসূচি পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এতে সহায়তা করছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস।
আলোচনার শুরুতে এইচপিভি কী, কীভাবে এটি সংক্রমিত হয়ে জরায়ুমুখ ক্যানসার সৃষ্টি করে, এটি প্রতিরোধে টিকার কার্যকারিতা, অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকা নিবন্ধন করার উপায় সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, ১৮ দিনব্যাপী এ কর্মসূচির প্রথম দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি এবং বাকি দিনগুলোতে গ্রুপভিত্তিকভাবে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের বিনা মূল্যে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, প্রতিবছর বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রায় লাখে ১১ জন নারী। দেশে নারীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্যানসার এটি। এইচপিভি জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ বছর। আক্রান্ত রোগীদের প্রায় সবাই শনাক্ত হন একদম শেষ সময়ে গিয়ে। তখন আর সেরে ওঠার উপায় থাকে না। ৩৫-৫০ বছর বয়সের মেয়েদের বেশির ভাগ এ সমস্যা টা ধরা পড়ে থাকে। কিন্তু, কিশোরী বয়সে মাত্র একটি টিকা নিয়ে সারা জীবনের জন্য এই ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।
আলোচনা সভায় জরায়ুমুখ ক্যানসার সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেন মেডিকেল অফিসার ডাঃ রেসমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস একটি যৌনবাহিত ভাইরাস। এই ভাইরাসের ১৩ ও ১৮ নম্বর সেলোটাইপ যৌনাঙ্গে ও জরায়ুমুখে ক্যানসার সৃষ্টি করে। নারীরা আক্রান্ত হলেও এটির বাহক মূলত পুরুষেরা। বাল্যবিবাহ, অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান ধারণ, বহু গর্ভধারণ, একাধিক যৌনসঙ্গী, ধূমপায়ী জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধকারী বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রজনন সম্পর্কে অসচেতন জনগোষ্ঠী এই ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছেন।’
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসার ডাঃ এস এম মাহমুদুর রশিদ
বলেন, গত বছর ঢাকা বিভাগে স্কুল পর্যায়ে প্রায় ১৫ লাখের বেশি কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়েছে। এতে কারও শরীরে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এই সাফল্যের ফলে এ বছর অন্য ৭টি বিভাগের সব জেলা, উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের সব স্কুল ও স্কুল বহির্ভূত কিশোরীদের এই টিকা দেওয়া হবে। টিকা গ্রহণের জন্য কিশোরীরা ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে নিজেরাই নিবন্ধন করতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর।
সিভিল সার্জন অফিসার ডাঃ এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন, এই উদ্যোগের বৃহত্তর লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে সম্পূর্ণভাবে জরায়ুমুখ ক্যানসার মুক্ত করা। এর জন্য এখন থেকেই সর্বজনীন জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এইচপিভি টিকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডাঃ ফারহানা হক বলেন, কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তো শুধু সে একা কষ্ট পায় না। তার সঙ্গে পরিবারও দুর্দশায় পড়ে। ক্যানসার হলে ব্যাপক অর্থনীতিক ক্ষতিও অনিবার্য। আমাদের সবাইকে এভাবেই একে অপরের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সব প্রান্তের মেয়েরা নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করে তুলতে হবে।’
কোনো কিশোরী যেন টিকা থেকে বাদ না যায়, সে জন্য সার্বিক সহায়তা চেয়ে বক্তব্য দেন সভার প্রধান অতিথি সিভিল সার্জন অফিসার ডাঃ এস এম মাহমুদুর রশিদ
সভায় আরও বক্তব্য দেন ডাঃ শাহনাজ পারভীন, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আস শামস তিলক,জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাঃ শামশুনাহার,সাংবাদিক কামাল সুকরানা, আজিজুর রহমান শিশির, প্রমুখ।