জশাহীর বাঘা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে বাঘায় থমথম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বেলা ২টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অবিস্ফোরিত তিনটি ককটেল পড়েছি।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন,বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবলু, আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী,উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান,জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকারী কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, আবদুল খালেক, জারমান আলী, আশিক হোসেন,সুলতান আলী, ফিরোজ হোসেন,,শাহাদত হোসেন, ইশতিয়াক হোসেন, কামাল হোসেনসহ অনন্ত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। দিকে পথচারী উজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি পুলিশের টিয়ারসেলে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ দুজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ইনু কেন্দ্রীয় কার্যকারী কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি জানান,পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গিয়ে তিনি হামলায় আহত হয়েছেন।
জানা গেছে,শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার বাঘা উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর কর্মী সমর্থকরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।
অপর দিকে একই দিনে বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে মানববন্ধনের ডাক দেয় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। উভয় পক্ষের কর্মী সমর্থকরা উপজেলা চত্বরে জড়ো হলে এরমধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জন আহত হন।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিআর শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনায় বাঘা বাজার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এছাড়া এমপি শাহরিয়ার আলম গ্রুপ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু এবং বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর অনুসারীরা দেশিয় অস্ত্র হাতে বাঘা বাজারের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়েছিল। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে টিএইচএ ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, এখানে ১৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আরও অনেকেই বিভিন্নস্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুত্ব হওয়ায় তাদের রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। আর যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের চিকিৎসা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন,এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এছাড়া বাবুলকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লায়েব উদ্দিন লাভলু ও আক্কাছ আলীর পক্ষে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, কয়েক বছর ধরে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সম্পাদক অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ক্রেতার দলিল সম্পন্ন করতেন। এ নিয়ে সমিতি ভেঙ্গে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান কমিটি পেশি শক্তি ব্যবহার করে সমিতির কাজকর্ম চালাতে চায়।
আমরা এ সমিতির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ ও অবৈধ কমিটি বাতিল এবং অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের আয়োজন করা হলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের পক্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদেক কবীর বলেন, কিছুদিন হলো শাহিনুর রহমান পিন্টুকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। আগে তারাই সমিতি কীভাবে চালাতেন ভাল বলতে পারবেন। তবে সমিতির নিয়মের বাইরে সাবেক সভাপতি চলতে চান। এ নিয়ে একটি পক্ষ মিছিল করার নামে আমাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে।