চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গ্রাহকদের জামানতের ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা ফেরত পেতে মঙ্গলবার গ্রাহকরা ওই এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক বকুলের বাড়িতে গেলে চাঞ্চল্যকর অবস্থান সৃষ্টি হয়।
জানা যায় নাচোল থানার ফতেপুর ইউনিয়নের টাকা হারা এলাকায় কয়েকজন যুবক উত্তরবঙ্গ সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিও খুলে সদস্য ভর্তি করতে থাকে।
তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা এনজিওটি গ্রাহকদের অল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৩০০ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা সঞ্চয় হিসেবে গ্রহণ করে।
এ ছাড়া আরও প্রায় ১০০ জন গ্রাহককে মোটা অঙ্কের লাভ দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে প্রায় ১৬.৫০ কোটি টাকা জমা নেয়। কেউ কেউ ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিপোজিটও করে ওই এনজিওতে। এক বা দুই বছর মেয়াদি এসব ডিপোজিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে টাকা তুলতে গেলে এনজিও কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করতে থাকে। এ নিয়ে এলাকায় ১ বছর আগে এনজিও অফিসে দেনদরবার হয়। এতে এনজিও কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকার করেও নির্দিষ্ট তারিখে টাকা না দেওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে, এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাপাত্তা হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এনিয়ে ওই এলাকার একজন গ্রাহক মামলা করেন সেই মামলায় উক্ত এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক বকুল জেলেহাজতে যান, জেল থেকে বকুল জামিনে বেরিয়ে আসেন। বকুল জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকজন গ্রাহক শাখা ব্যবস্থাপক বকুলের বাড়িতে টাকার কথা বলতে গেলে বকুল গ্রাহকদের সাথে খুব খারাপ আচরণ ও মামলার ভয় ভীতি দেখান। এক পর্যায়ে ওই এলাকার প্রয় ৩০/৪০ জন গ্রাহক সম্মিলিতভাবে রবিবার বকুলের বাড়িতে গিয়ে টাকা চাইলে টাকা দিতে বকুল অস্বীকৃতি জানায়।
বকুলের বাড়িতে আসা আশরা বিবি নামে এক বিধবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও আমার বাড়িতে লালন পালন করা গরু বিক্রি করে দু'বছর ধরে উত্তরবঙ্গ সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় ৪৫০০০০ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছি, এখন তারা টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
এফডিআর করা সদস্য ঈশ্বরচন্দ্র আদিবাসী বলেন, বেশি লাভের আশায় আমি নিজে খুব কষ্টে উপার্জন করা ৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছি এবং আমাদের আদিবাসী অনেকে এই এনজিওতে টাকা রেখেছেন। এ এলাকার আব্দুর রহমান ৪ লাখ ২০হাজর টাকা, রনি মাহাতো ৩ লাখ ৩০ হাজার , নাজমা বেগম ৭৪ হাজার, কমাল বেগম ১লাখ২০ হাজার, মাবিয়া বেগম৩১ লাখ ৮০ হাজার, কাটা তিন লাখ সকল মাড্ডি ৬ লাখ,রুমা বেগম ১৫ লাখ,দিলীপ মাহাতো ১৮ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। এমন ১৫০০ জন গ্রাহকের এফডিআর করা টাকা সমিতি কর্তৃপক্ষ ফেরত দিতে টালবাহানা করছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায় সংস্থার একজন নির্বাহী পরিচালকের ভাই শাখা ব্যবস্থাপক বকুল এনজিওর টাকা নিয়ে বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি ও আমবাগান এবং কিনেছেন ফসলি জমি।
নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান সহ সংস্থার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবাই এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাইদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোন একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।