নাচোল প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে জোড়া খুনের মামলার অন্যতম ২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মামলার ১ নম্বর আসামি শাহিন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন।
গতকাল রবিবার বেলা ১১ টায় সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম। পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ সুপার বলেন- গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে শহীদ স্মৃতি সংঘের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠান চলাকালে খলশী গ্রামের কিছু কিশোর অনুষ্ঠানস্থলে গোল হয়ে নাচানাচি করছিল। তাদের এই অবস্থা দেখে ১ নম্বর আসামি শাহিনের ভাতিজা তামিম নামের একজন তাদেরকে এসব করতে নিষেধ করে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তামিমের সাথে কথা কাটাকাটি ও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ মারামারি করতে করতে মাছপট্টির টিনশেডের নিচে চলে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে শাহিন তার সহযোগীদের নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং শাহিন তার পকেটে থাকা চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এতে মাসুদ ও রায়হান নামে দুজন নিহত হন এবং চারজন আহত হন। এ ঘটনায় নাচোল থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়।
পুলিশ সুপার বলেন- গত ৬ জানুয়ারি মামলাটির তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখাকে দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. ফয়সাল হাসানকে। এরপর মামলার এজাহারনামীয় আসাসিদেরকে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা শাখা অনুসন্ধান শুরু করে। একপর্যায়ে জেলা গোয়েন্দা শাকার একটি চৌকশ টিম বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৮ জানুয়ারি হতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ঢাকা জেলার সাভার থানা এলাকা হতে কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. শাহিন রেজা (২২)কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার শাহিন নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বাহির মল্লিকপুর গ্রামের মো. তোফজুল হকের ছেলে।
একই দিন এজাহারনামীয় ৭ নম্বর আসামি মো. সামাদ আলী (৩০)কে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সামাদ বাহির মল্লিকপুর গ্রামের মো. আতাউর রহমানের ছেলে।
জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা আরো বলেন- তাদরেকে গ্রেপ্তারের পর জেলা গোয়েন্দা অফিসে হাজির করে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ১ নম্বর আসামি মো. শাহিন রেজার দেয়া তথ্যমতে এবং পরবর্তীতে তার দেখানো জায়গায় ঘটনাস্থলের পাশে ময়লার স্তূপ থেকে লোকজনের উপস্থিতিতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার তাদেরকে আদালতে হাজির করলে আসামি মো. শাহিন রেজা দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। হত্যাকান্ডে জড়িত দুজনসহ মোট ৪ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন- ঘটনার আগে খলসী গ্রামের একটি পেয়ারাবাগানে স্থানীয় সালাম ও শাহিন পলিথিন (পিপি) বাঁধার কাজ করছিল। কাজ করাকালীন কোনো এক সময়ে শাহিন গোপনে সালামের প্রস্রাব করার ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়। বিষয়টি সালামের নজরে এলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসও হয়। তবে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আসলে কি কারণে হত্যাকা-টি ঘটেছে তা অধিক তদন্ত করে বলা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে চাপাইনবাবগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইয়াসির আরাফাত, গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহীন আকন্দসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।