চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
লেখক: মো: মামুনুর রহমান
সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) ও আইসিটি জেলা অ্যাম্বাসেডর, রাজশাহী
গুল-গোফুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়,
গোদাগাড়ী, রাজশাহী
‘সাময়িকপত্র/সাময়িকপত্রিকা/সাময়িকী’ ও ‘সংবাদপত্র’ উভয়ই সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। সে হিসেবে সাধারণত দুটোই সংবাদপত্র। তবে লেখার বিষয়, প্রকাশকাল, সজ্জা, আকৃতি, উদ্দেশ্য প্রভৃতি বিবেচনায় উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। নিচে কয়েকটি পার্থক্য উল্লেখ করা হলো:
১. সূচনা: রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের (খ্রিষ্টপূর্ব ১০০— খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪) শাসনামলের প্রথমবর্ষে বিশ্বের প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। নাম ছিল ‘Aeta Diunna (বাংলায়: প্রতিদিনের খবর)’। এই সংবাদপত্রে দৈনন্দিন খবরের পাশপাশি সিনেটের কার্যবিবরণ, দাপ্তরিক ঘোষণা, আদালতের মামলা ও রায়, জন্ম-মৃত্যু, আর্থিক প্রতিবেদন, খেলাধুলা, সাহিত্যকর্ম প্রভৃতি বিষয়ের ওপর খবরাখবর প্রকাশ করা হতো। অন্যদিকে, বিশ্বের প্রথম সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয় সপ্তদশ শতকে। সবচেয়ে প্রাচীনতম সাময়িকপত্রের নাম ‘এরবলিশে মোনাথস আন্টারডিউজেন (Erbauliche Monaths-Unterredungen)’। দর্শনবিষয়ক এই সাময়িকপত্র/সাময়িকপত্রিকাটি ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানিতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। সবচেয়ে প্রাচীন সাময়িকপত্র যা এখনও প্রকাশিত হয় তা হলো ‘দ্য স্কটস ম্যাগাজিন’। এটি ১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়।
২. প্রকাশবিরতি: ‘সংবাদপত্র’ নিয়মিতভাবে প্রতিদিন অর্থাৎ চব্বিশ ঘণ্টা পর পর প্রকাশিত হয় এবং এভাবে এর ব্যবস্থাপনা গঠিত। তাই এই প্রকৃতির সংবাদপত্র ‘দৈনিক’ নামে সমধিক পরিচিত। অবশ্য এমন কিছু সংবাদপত্র আছে যা প্রতিদিন একাধিকবার প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, সাময়িকপত্রসমূহ সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, এক মাস, ছয় মাস, এক বছর ব্যবধানে প্রকাশিত হয়। এগুলো যথাক্রমে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ষাণ্মাসিক, অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক (সাময়িকপত্র) নামে পরিচিত।
৩. উদ্দেশ্য: সংবাদপত্র নানাবিধ উদ্দেশ্য নিয়ে নানা বিষয়ে লেখালিখির জন্য প্রকাশিত হয়। এখানে কী থাকবে না থাকবে তার কোনো সীমা-পরিসীমা হয় না। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের খবরাখবর সংবাদপত্রের মুখ্য বিষয় হয়ে থাকে। প্রাত্যহিক জীবনে মানুষের প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অনেক বিষয় নিয়েও এখানে আলোচনা হয়। পক্ষান্তরে, সাময়িকপত্র সাধারণত নির্দিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। তাই এটি মূলত বিষয়ভিত্তিকপত্রিকা। সাহিত্য, বিজ্ঞান, আইন, ইতিহাস, ভুগোল, ভাষা, সংস্কৃতি খেলাধূলা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একদিনের বেশি যে-কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সাময়িকপত্রিকা প্রকাশিত হয়। যদিও তৎসঙ্গে আরও অনেক বিষয়ের বিবরণ এখানে থাকে।
৪. প্রকাশনীয় বিষয়: সদ্য সংগঠিত ঘটনা বা তাজা খবরের প্রচারই সংবাদপত্রের মূল বিষয়। তাই সাম্প্রতিক ঘটনার বিবরণই সংবাদপত্রের মুখ্য বিষয় হিসেবে গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়। অধিকাংশ পাঠক সংবাদপত্রে এমন তাজা খবরই প্রত্যাশা করে। অন্যদিকে, সাময়িকপত্রসমূহ সাধারণত সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ষাণ্মাসিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাই এখানে তাজা খবরের প্রচার গুরুত্ব পায় না কিংবা অনুরূপ কোনো সুযোগও থাকে না। পাঠকও তা প্রত্যাশা করে না। ধরন অনুযায়ী সাময়িকপত্রে সাহিত্যকর্ম, গবেষণা, মৌলিক রচনা, সাধারণ জ্ঞান, শিক্ষাবিষয়ক রচনা প্রভৃতি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রকাশিত করা হয় ।
৫. খবর: সকল সংবাদপত্রে সাম্প্রতিক খবরের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক বিবরণও প্রকাশিত হয়। কিন্তু, সকল সাময়িকপত্রে বিষয়ভিত্তিক বিবরণ প্রকাশিত হলেও সাম্প্রতিক খবর প্রকাশিত নাও হতে পারে। কিছু কিছু সাময়িকপত্রে বিষয়ের বাইরে অন্য কিছু প্রকাশ করে না। তাই বলা যায়, সকল সংবাদপত্রই সাময়িকপত্র, কিন্তু সকল সাময়িকপত্র সংবাদপত্র নয়।
৬. আকার: সংবাদপত্রের পৃষ্ঠার আকার সাধারণত বড়ো হয় এবং সেগুলো খোলা অবস্থায় থাকে। পক্ষান্তরে, সাময়িকপত্রের পৃষ্ঠা সাধারণত আকারে ছোটো হয়। কিছু কিছু সামায়িকপত্র পুস্তকের মতো বাঁধাই করে প্রকাশ করা হয়।
৭. সাময়িক-সাময়িকপত্র: কিছু কিছু সাময়িকপত্র কেবল নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা উৎসবকে উপলক্ষ্য করে কিছু দিনের জন্য প্রকাশিত হয়। ওই বিষয় বা উৎসব শেষ হয়ে গেলে সাময়িকপত্রটির প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায়। যেমন: বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলাকালীন খেলার খবরাখবরকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশিত পত্রিকা। অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত সাময়িকপত্র। এটি দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হলেও সাময়িক সময়ের জন্য প্রকাশিত হয়। তাই এটি সাময়িকপত্রের অন্তর্ভুক্ত।
৮. সংবাদপত্রে কোনো উপ-শিরোনাম থাকে না। অন্যদিকে, সাময়িকপত্রের উপ-শিরোনাম থাকতে পারে।