নাসিম আলী
পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের অধিকাংশ লেখাপড়া জানা বাঙালিই ইলামিত্রের নাম জানেন। কিন্তু কম বয়সিরা হয়তো এখনো তাকে তেমনভাবে জানতে পারেননি।
ইলামিত্র একজন বাঙালি মহীয়সী নারী এবং সংগ্রামী কৃষক নেতা। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন।ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন।। মহীয়সী এ নারীর স্মরণে ও তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গড়ে তোলা হলো ‘ইলা মিত্র সংগ্রহশালা’।
১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সংগ্রামী নারী ইলামিত্র। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে আদিবাসী এলাকা নাচোলের রানী হিসেবে তাকে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তাদের আদি নিবাস ছিল ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে তারা সবাই কলকাতায় থাকতেন।
কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত নাচোলের রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশেই ২৬ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ইলামিত্র সংগ্রহশালাটি।বিপ্লবী এই নারীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এমন মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করেন নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(সাবেক) মোহাইমেনা শারমীন। উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) সবুজ হাসানের সার্বিক দেখভালে সংগ্রহশালাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
সংগ্রহশালাটি নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শিল্পমন্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের বেলকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনটির কিছুদূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে।
উদ্বোধনের আগেই এই সংগ্রহশালাটি দেখতে দুর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছে দর্শানার্থীরা। এবিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান বলেন,সাবেক ইউএনও মোহাইমিনা শারমিন স্যার বিপ্লবী নেত্রী ইলামিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে ইলামিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালাটি নির্মানের উদ্যোগ নেন।স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক আমি সংগ্রহশালাটি নির্মানে সার্বিক তদারকি করি।সংগ্রহ শালাটি দেখতে ইতিমধ্যে দুর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছে দর্শানার্থীরা।নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন জানান, ইলা মিত্রের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি নামমাত্র ছিল।
২০২২ সালে ইলা মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে এসব বিষয় অবগত হই এবং তখন থেকেই ভাবনা শুরু হয় সেখানে কিছু করার।পরে সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই সংগ্রহশালাটি ইলিমিত্রের স্মৃতি সংরক্ষনে অনন্য ভূমিকা রাখবে।নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বর্তমান) নিলুফা সরকার বলেন,বিপ্লবী নারী ইলামিত্র স্মৃতি সংরক্ষনে এবং নতুন প্রজন্ম কে সংগ্রহশালাটি ইতিহাস সর্ম্পকে ধারনা দিবে।নাচোল বাসীর জন্য এটি স্মরনীয় হয়ে থাকবে।