চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্থানীয় সরকার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁওয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন— জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ।
শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন— হানাদার বাহিনী যখন দেখল তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে মেধাবী ব্যক্তিদের বেছে বেছে হত্যা করতে শুরু করে। বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ চালায়। নতুন বাংলাদেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেই জন্যই তারা জাতিকে মেধাশূন্য করতে এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা পরাজিত হয়ে এদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেছে; কিন্তু যে চেতনা ও উদ্দেশ্য ধারণ করে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল তার প্রতিফল আমরা পাইনি। সেই শোষণ-বঞ্চনার অবসান এখনো হয়নি। তাই শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের আবার আন্দোলন করতে হয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য, এই নতুন বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলব। যেখানে থাকবে না, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য ইত্যাদি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, চক্রান্ত এখনো শেষ হয়নি। এই আন্দোলনের সুফলকে নস্যাৎ করতে এখনো চক্রান্ত হচ্ছে। যে প্রেক্ষাপটে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য পাক হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবী নিধন করেছিল, ঠিক তেমনি একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে।
আব্দুস সামাদা বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব মাত্র ৩ মাস হলো, কিন্তু চক্রান্ত থেমে নেই। পাক হানাদার বাহিনীকে যেমন এদেশের কিছু লোক সহযোগিতা করেছিল, ঠিক তেমনই এদেশেরই কিছু লোক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ ও সোচ্চার থাকতে হবে। আমরা একাত্তরে যেভাবে একতাবদ্ধ হয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলাম, ঠিক তেমনি পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের একতাবদ্ধ থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। জুলাই-আগস্টের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের সাবেক সাংাগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলম, গণপূর্ত অধিপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সাদরুজ্জামান আমির আল মাহফুজ, জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক গোলাম মোস্তফা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন খান ও নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহবুবা ফেরদৌস।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাকিব হাসান তরফদার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তরিকুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ও জাতির সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।পরে মোনাজাত করা হয়।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অনান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।