চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
‘প্রবাসীর অধিকার-আমাদের অঙ্গীকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ-আমাদের সবার’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসন এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
স্থানীয় সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁওয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন- অভিবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা হলো নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা। আমরা যদি নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটি ব্যক্তিপর্যায়ে যেমন নিরাপদ হবে, পরিবারের পক্ষেও নিরাপদ হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে দেশ লাভবান হবে। আমাদের বাংলাদেশ থেকে যারা প্রবাসে যান অভিবাসী হিসেবে, তাদের প্রায় সবাই অদক্ষ লেবার বা শ্রমিক হিসেবে যান। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যার যে বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই, ওই জাতীয় কাজ তিনি কখনোই করেননি, তেমন কাজই তাদের বিদেশে গিয়ে করতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক বলেন- সাইপ্রাসে প্রধান কাজ হলো সমুদ্রে মাছ ধরা। কিন্তু যার মাছ ধরার দক্ষতা নেই, সে কি করে মাছ ধরবে? এই জন্য যখন আমরা দেশ থেকে বিদেশে যাবো, তখন খুব সতর্কতার সাথে জানতে হবে যে, ওই দেশে গিয়ে আমি কি কাজ করব? তিনি বলেন, যারা যাচ্ছেন, তাদের করণীয় হলো, তার ভিসার কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, রিক্রুটিং এজেন্সিটি বৈধ কিনা, তারা সঠিকভাবে নিয়ে যাবে কিনা, নিয়োগকর্তার সাথে কোনো কন্ট্রাক্ট আছে কি না, অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে কিনা, কত টাকা বেতন দেয়া হবে, কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে তা চুক্তিপত্রে আছে কিনা- এইসব বিষয় জেনে নিতে হবে। নইলে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এজন্য জেনে-বুঝে বিদেশ যেতে হবে। যদি দক্ষ হয়ে বিদেশ যাওয়া যায়, তাহলে এখন যে পরিমাণ টাকা আনতে পারছে তখন এর থেকেও বেশি আনা যাবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকার চেষ্টা করছে, পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আপনাদের বিএমইটি, টিটিসির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, বোয়েসেল আছে, সেখানে একদম ন্যূনতম ব্যয়ে আমরা বিদেশ যেতে পারব। আমাদের জানতে হবে, কোথায় গেলে আমরা এই সেবাগুলো পেতে পারি। আপনারা নিজেরা জানবেন, অন্যদের জানতে ও জানাতে সহযোগিতা করবেন। তাহলে কেউ প্রতারিত হবেন না। আর দালালচক্রের মাধ্যমে কেউই বিদেশ যাবো না। নিজে দক্ষ হবো, প্রশিক্ষিত হবো তারপর বিদেশ যাবো।
আব্দুস সামাদ বলেন- শুধুমাত্র দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যাবার কারণে ফিলিপাইনের প্রবাসীরা অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। পক্ষান্তরে আমাদের কর্মীদের দক্ষতা না থাকায় অনেক বেশি লোক বিদেশে যাবার পরও তাদের থেকে অনেক কম মুদ্রা আয় করেন। কাজেই যে কাজে যাবেন, সেই কাজটির বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে বৈভাবে বিদেশে যাবেন, তাহলে বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-টিটিসির অধ্যক্ষ মো. মঈন উদ্দিন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বিতীয় কর্মকর্তা কার্ত্তিক কুমার প্রাং।
সূচনা বক্তব্যে অভিবাসন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আখলাক-উজ-জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দুরুল ইসলাম, ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর আশিকুজ্জামান, সফল প্রবাসী মনিরুল ইসলাম।পরে একজন ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে এ উপলক্ষে র্যালি বের করা হয়। জেলা প্রশাসন এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসসহ কর্মসূচিতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি ও ব্র্যাক অংশগ্রহণ করে।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আখলাক-উজ-জামান জানান, গত একযুগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ৬২ হাজার ৯৩৩ জন কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। তার মধ্যে ২০১৫ সালে গেছেন ৪ হাজার ৫৩৮ জন, ২০১৬ সালে ৫ হাজার ৬৮৩ জন, ২০১৭ সালে ৬ হাজার ৬০২ জন, ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৮৮৯ জন, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৬১২ জন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির বছরে কমে গিয়ে বিদেশ যান ১ হাজার ৮৮১ জন, ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন দেশে যান ৪ হাজার ২৬২ জন, ২০২২ সালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে বিদেশ যান ৯ হাজার ১১৪ জন কর্মী, ২০২৩ সালে ১০ হাজার ৬৫৯ জন এবং চলতি বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিদেশে গেছেন ৭ হাজার ৬৯৩ জন।